Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চাঙড় খসা ঘরেই ক্লাস চলছে কাকদ্বীপের স্কুলে

চাঙড় ভেঙে পড়ছে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরাতে হয়েছে ক্লাসরুম। স্কুলের বারান্দায় জমে রয়েছে জল। তা থেকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। এরকমই অবস্থা কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যানিকেতনের।

বেহাল: জ্ঞানদাময়ী বিদ্যানিকেতনের ঘরের অবস্থা এমনই। নিজস্ব চিত্র

বেহাল: জ্ঞানদাময়ী বিদ্যানিকেতনের ঘরের অবস্থা এমনই। নিজস্ব চিত্র

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

চাঙড় ভেঙে পড়ছে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরাতে হয়েছে ক্লাসরুম। স্কুলের বারান্দায় জমে রয়েছে জল। তা থেকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। এরকমই অবস্থা কাকদ্বীপের অক্ষয়নগর জ্ঞানদাময়ী বিদ্যানিকেতনের।

৫০ বছরে স্কুলটি একবারও মেরামত করা হয়নি। সে কারণেই ওই দশা হয়েছে স্কুলের বলে জানালেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু ওই স্কুলই নয়, কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন বড় স্কুলে মেরামতির টাকা যোগাড় হচ্ছে না। ফলে অনেক স্কুলেরই অবস্থা খারাপ। একাধিকবার প্রশাসনের কাছে টাকার আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

কাকদ্বীপের অন্তত চারটি হাইস্কুলের অবস্থা খারাপ। জ্ঞানদাময়ী বিদ্যানিকেতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অশোক মণ্ডল বলেন, ‘‘১৯৬৯ সালের পর বড় মেরামতি করা হয়নি। চাঙড় ভেঙে পড়ছে। বাচ্চাদের ক্লাসরুম বদল করতে হচ্ছে।’’ স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, প্রায় ১০০ ফুট লম্বা স্কুল বাড়ির ভিতরে খুবই খারাপ অবস্থা হয়ে রয়েছে। দোতলার বারান্দায় বৃষ্টির জল, আবর্জনা জমে রয়েছে।

স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন, ক্লাসঘরের ফাটল বাড়ছে। এমনি ক্লাস সরিয়ে নিলেও ওই স্কুলবাড়ির গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার শিক্ষার ক্লাস চলে চাঙড় খষে পড়া, ফাটল ধরা ঘরেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এর আগে এলাকার মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা তাঁর তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে চেয়েছিলেন ১২০০ ছাত্রছাত্রীর ওই স্কুলের জন্য। কিন্তু তা এখনও পাওয়া যায়নি। স্কুলের হিসেব, ওই টাকার বাইরে অনেক বেশি টাকার প্রয়োজন। একাধিকবার জেলা পরিষদ, জেলাশাসকের দফতরে আবেদন করেও ফল মেলেনি।

একই অবস্থা কাকদ্বীপ শিশুশিক্ষায়তন স্কুলেরও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ প্রামাণিক জানালেন, অন্তত ৭ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। প্লাস্টার করা, রং করার জন্য। তা না হলে প্রতি বর্ষায় জল চুঁইয়ে ঘরের ক্ষতি করছে, ব্ল্যাকবোর্ড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে স্কুলের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা দেনা রয়েছে। সে কারণে হাজার দু’য়েক ছাত্রছাত্রীর ওই উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের মেরামতি থমকে রয়েছে দিনের পর দিন। জেলাশাসকের দফতর, জে‌লা প্রশাসনের কাছে আবেদনও করা হয়েছিল স্কুলের তরফে কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তাই স্কুলের জন্মলগ্ন থেকেই কোনও মেরামত করা যায়নি।

অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু স্কুল ভবন বাড়ানোর জন্য সরকার থেকে কোনও টাকা বরাদ্দ করা হয়নি। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের একেবারে ধারেই স্কুলটি। কোনও প্রাচীরও নেই। স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে সবসময়ই চিন্তায় থাকেন শিক্ষকরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশকলি মণ্ডল জানান, সামনের বছর মাধ্যমিকের প্রথম ব্যাচ পরীক্ষা দেবে। অথচ ক্লাস করতে হচ্ছে পার্টিশন দিয়ে। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। ছাত্রীদের জন্য শৌচাগার নেই। প্রাচীর নেই। এ সব কারণে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফিস নিতে পারছি না।
ইতিমধ্যেই জেলা রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে প্রকল্প আধিকারিক থেকে শুরু করে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছেও আবেদন করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কবে বাড়ি মেরামতি এবং নতুন বাড়ি তৈরির সাহায্য পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত।

বেশিরভাগ স্কুল থেকেই জেলা স্কুল পরিদর্শক বাদলকুমার পাত্রের দফতরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। বাদলবাবু বলেন, ‘‘কেবল কাকদ্বীপের যে সমস্ত স্কুলের আবেদন পেয়েছি, সেগুলি সবই স্কুলশিক্ষা দফতরে সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলে স্কুলগুলির প্রয়োজন অনুসারে টাকা সাহায্য করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Classroom Kakdwip School Condition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE