পড়ে রয়েছে মূল্যবান ভেসেল। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ২ বছর হয়ে গেল ভেসেল পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ দিকে হিঙ্গলগঞ্জ থানার নেবুখালি-দুলদুলি ও ভান্ডারখালি জেটিঘাট দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার করেন যাত্রীরা।
স্থানীয় ও ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, হিঙ্গলগঞ্জ থানার নেবুখালি দুলদুলি ও ভান্ডারখালি জেটিঘাট দিয়ে বহু মানুষ প্রতিদিন পারাপার হন। সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ এই তিন জেটিঘাট দিয়েই পার হয়ে হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক অফিসে যান। এ ছাড়া অনেক মানুষ এই জেটিঘাটগুলি দিয়েই নদী পেরিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্কুল, অফিসে যাতায়াত করেন। দুলদুলির দিকে কিছু মাস আগে ভাসমান জেটিঘাট হয়ে গেলেও নেবুখালি ও ভান্ডারখালিতে এখনও পুরনো মডেলের কংক্রিটের জেটিঘাট। শুধু তাই নয়, যাত্রী সংখ্যার তুলনায় অনেকটা সংকীর্ণ নেবুখালি জেটিঘাট। তাই যাত্রী পারাপারে খুব সমস্যা হয়। অনেক সময় যাত্রী জেটিঘাট থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে জখম হন।রায়মঙ্গল, ডাঁসা ও ইছামতী নদীর সংযোগস্থলের তিনদিকে থাকা তিন জেটিঘাটে যাত্রীদের যাতে নৌকা করে ঝুঁকির পারাপার করতে না হয় তাই ২০১৮ সালের নভেম্বর মাস নাগাদ রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে যাত্রী পারাপারের জন্য একটি ভেসেল দেওয়া হয়। যার দাম আনুমানিক ৫০-৬০ লক্ষ টাকা। দু’বছর হয়ে গেল কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই ভেসেল কাজে লাগানো হল না। এই ভেসেলটি এখন রাখা আছে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক অফিসের পাশে নদীর চরে। ফলে পড়ে থেকে থেকে ভেসেলের বিভিন্ন অংশ নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে, যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে, এক রাশ সমস্যা নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার করছেন। এ বিষয়ে এই খেয়াঘাট দিয়ে পারাপার হওয়া যাত্রী সন্দীপ রায় অতুল ঘোষ জানান, অনেক সময় নৌকায় একাধিক বাইক, সাইকেল-সহ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী তোলা হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় নৌকায় উঠতে ভয় করলেও উঠতে হয়। কারণ, একটি নৌকা ছেড়ে দিলে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। অফিসে পৌঁছনো বা ট্রেন ধরার তাড়া থাকে। ভেসেল থাকলে ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও নিরাপদে পারাপার করা যেত। এক রাশ ভয় নিয়ে নৌকা পারাপার করতে হত যাত্রীদের। কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা রাকিব মণ্ডল, শুভ্রা দাস, গোবিন্দ নস্কর নামে কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া জানান, বৃষ্টির মধ্যে নৌকা করে পারাপার করতে গিয়ে পোশাক, বই-খাতা ভিজে যায়। অনেক সময় বাড়ি চলে আসতে হয়। ভেসেল চললে খুব সুবিধা হয়।
এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন সুন্দরবনের মানুষ যাতে নিরাপদে ভাল ভাবে নদী পারাপার করতে পারেন, তাই এই ভেসেল এসেছিল। তবে ব্লকের পদাধিকারীরা বছর পেরিয়ে গেলেও ভেসেল এখনও চালাতে পারল না। যেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ভেসেল চালাতে পারলে মানুষের সুবিধা হত।’’
কিন্তু কেন চালানো হচ্ছে না ভেসেলটি?
এ বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের ব্যাখ্যা, এই ভেসেল চালাতে গেলে ৬ জন কর্মী লাগবে। তাঁদের কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন দিতে হবে। অর্থাৎ মাসে ৬০ হাজার টাকা শুধু কর্মীদের বেতন দিতে খরচ হবে। এ ছাড়া তেল খরচও দেখভাল খরচ রয়েছে। যাত্রী পিছু ২ টাকা করে নিয়ে, এই বিপুল খরচ বহন করা সম্ভব নয়। বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘাটতি থেকে যাবে। এর জন্যই ভেসেল এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, ‘‘দুলদুলিতে ভাসমান জেটি থাকলেও নেবুখালি ও ভান্ডারখালিতে ভাসমান জেটি নেই। ফলে ভেসেল পরিষেবা চালু করা যাচ্ছে না। এই দু’দিকে ভাসমান জেটি যাতে হয় তার জন্য পরিবহণ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ভাসমান জেটি হলে তারপর ভেসেল পরিষেবা চালুর চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy