Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Hingalganj

সাঁকো পেরোতে প্রাণ যায় যায়

২০১৭ সালে গোমতী নদীর উপরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। ঢিমেতালে কাজ চলার জেরে এত দিনে মাত্র কয়েকটা থাম তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সেই কাজও বন্ধ।

নড়বড়: এ ভাবেই যাতায়াত করেন গ্রামের মানুষ। নিজস্ব চিত্র

নড়বড়: এ ভাবেই যাতায়াত করেন গ্রামের মানুষ। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৪
Share: Save:

দু’টি বাঁশ পাতা হয়েছে মাত্র। ধরার জন্য দু’দিকে রয়েছে দ়ড়ি দিয়ে বাঁধা বাঁশ। তার উপর দিয়েই বিপজ্জনক ভাবে চলছে পারাপার। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর থানা এলাকায় গোমতা নদীর উপরে ওই সাঁকো পেরোতে গিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে।

২০১৭ সালে গোমতী নদীর উপরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। ঢিমেতালে কাজ চলার জেরে এত দিনে মাত্র কয়েকটা থাম তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সেই কাজও বন্ধ।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের হেমনগর ও কালীতলা পঞ্চায়েতের পারঘুমটি গ্রাম— এই দুই গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে গোমতী নদী। নদী মজে গিয়ে এখন খালের চেহারা নিয়েছে। তবে সাঁকোর যে অবস্থা তাতে যে কোনও দিন ভেঙে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ওই সাঁকো দিয়েই স্কুলের কচিকাঁচারা থেকে শুরু করে বয়স্ত মানুষেরা পারাপার করেন। অনেক সময় স্কুল পড়ুয়াদের কাঁধে সাইকেল নিয়ে পেরোতেও দেখা যায়। প্রসূতিরা সাঁকো পেরোতে সমস্যায় পড়েন। ছোট শিশুদের কোলেনিয়ে ওই সাঁকো পেরোতে নাজাহাল হন মায়েরা।

শম্পা মণ্ডল নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই সাঁকো পেরিয়ে প্রায় দিনই ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। বিপজ্জনক ভাবে নদী পেরোতে হয়। বুক দুর দুর করে। কিন্তু এ ভাবে পারাপার করা ছাড়া উপায় নেই।’’ স্থানীয়রা জানায়, পারঘুমটি গ্রামের মানুষদের গোমতী নদী পেরিয়ে হেমনগরে আসার একান্ত প্রয়োজন। কারণ, হেমনগরে রয়েছে বাজার, স্কুল, থানা ইত্যাদি। তা ছাড়াও হেমনগর দিয়ে পারঘুমটি গ্রামের মানুষরা যোগেশগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, যোগেশগঞ্জ বাজার এবং হাসপাতালে যান। হেমনগর এলাকার মানুষদের বিভিন্ন প্রয়োজনে পারঘুমটি, কালিতলা বা সামসেরনগর যেতে হয় বিভিন্ন প্রয়োজনে। ফলে সবার ক্ষেত্রেই বাঁশের সাঁকো সম্বল। এক বাসিন্দা জানান, ওই সাঁকো দিয়ে না গেলে ১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। যা ব্যয়সাপেক্ষ। এই সাঁকোর পরিবর্তে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার মানুষ।

২০১৭ সালে সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা শেষ হয়নি এখনও। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে ৪ কোটি ২৮ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। প্রায় ১২ ফুট চওড়া ১৫০ ফুট লম্বা হওয়ার কথা ছিল সেতুটি। দু’দিকে প্রায় ৩০ মিটার করে অ্যাপ্রোচ রোড হওয়ার কথাও ছিল। এবং বছরখানেকের মধ্যেই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে হচ্ছিল। মাঝে মধ্যেই কাজ বন্ধ হয়ে যেত। গত বেশ কয়েক মাস ধরে সেতু নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একটি পিলার বেঁকেও গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হরিপদ রায়, তন্ময় রায় বলেন, ‘‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে স্কুলের বাচ্চারা প্রায়ই পড়ে যায়। সন্ধ্যায় সাঁকো পেরোনো বিপজ্জনক। আলো নেই।’’

স্থানীয় বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের সমস্যার কথা ভেবেই সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ এখানে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যে ঠিকাদার কাজ করছেন, তাঁর গাফিলতিতেই সেতুর কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। তাঁকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hingalganj Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE