উত্তপ্ত: পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ছিল শান্তিপূর্ণ স্মারকলিপির কর্মসূচি। তার বদলে বামেদের বিক্ষোভ-আন্দোলন ঘিরে দফায় দফায় ইটবৃষ্টি, বোমাবাজি, পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেটের ঘায়ে সোমবার বারাসতে আহত হলেন কয়েকশো মানুষ, পুলিশ কর্মী। আহতদের বারাসত জেলা হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি করানো হয়েছে। দফায় দফায় রাস্তা ও ট্রেন অবরোধের জেরে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে নাকাল হলেন বহু স্কুল পড়ুয়া, অফিস যাত্রী।
নারদা, সারদা-কাণ্ডে ধৃতদের শাস্তি, টাকা ফেরত, ইছামতীর মতো নদীগুলির সংস্কারের মতো ২৬ দফা দাবিতে সোমবার রাজ্য জুড়েই সিপিএম-সহ ১৭টি বাম দলের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। এ দিন বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হতে থাকেন বাম নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশও ছিল তৎপর। বারাসতে ঢোকার মুখে, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের মুখে ব্যারিকেড করে আটকে দেওয়া হয় কর্মী-সমর্থকদের। পাশাপাশি জেলাশাসকের অফিসের সামনেও ছিল তিনটি ব্যারিকেড। সেখানে জলকামান, সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি ছিল র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স।
বেলা দেড়টা নাগাদ গোলমালের সূত্রপাত। বারাসত আদালতের দিক থেকে হঠাৎই উত্তর দমদমের সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বামেদের একটি মিছিল ঢোকে। সেই মিছিল থেকেই কিছু কর্মী ব্যারিকেড ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেন। বাধা দেয় পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এর মধ্যেই হঠাৎ কয়েকটি বোমা ফাটে। আহত হন কয়েক জন। এরপরেই লাঠি চালানো শুরু করে পুলিশ। পাল্টা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে সমর্থকেরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ও রবার বুলেট ছোড়ে। ততক্ষণে জেলাশাসকের অফিসের চারপাশ জুড়ে পুলিশের সঙ্গে বামেদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে বোমা ও কাঁদানে গ্যাসের সেল এসে ফাটে বারাসত আদালতের আইনজীবীদের সেরেস্তায়। তা নিয়ে বামকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের বচসা শুরু হয়। সে সময়ে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন আইনজীবীরা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায়, আহত আইনজীবীদের দেখতে নেমে আসেন জেলা আদালতের প্রধান বিচারপতি।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বারাসতের চাঁপাডালি মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন বামকর্মীরা। বারাসত স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। লাঠি চালিয়ে অবরোধ তোলে পুলিশ। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক এমন পরিস্থিতি ছিল। বিকেল ৪টে নাগাদ পরিস্থিতি আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিকেলে বাম নেতৃত্ব জানান, সারা জেলা থেকে আসা ৩০ হাজার কর্মী-সমর্থককের উপরে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। তৃণমূল ও পুলিশের বোমা, লাঠিতে ৩০০ বেশি আহত কর্মীদের মধ্যে ১৭ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘জেলাশাসককে আগে জানানো হলেও তিনি এ দিন ছিলেন না। অথচ, এ দিন বারাসতে আরএসএস অনুমতি না নিয়েই মোটরবাইক মিছিল করেছে। তৃণমূল, বিজেপি ও পুলিশের একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।’’
তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি ও বিধায়ক রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘বিশৃঙ্খলতা নয়, যে কোনও আন্দোলন গণতান্ত্রিক পথেই হওয়া উচিত। বারাসতে যা যা হল তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’
আগে ঠিক করা সরকারি কাজে তিনি জেলার অন্যত্র ছিলেন বলে জানান জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। স্মারকলিপি নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসক ছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আনন্দ রায় জানান, এ দিন ১০ জন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। তারপরেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। এই ঘটনায় মোট ১২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy