Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোট সেরে ফেরার পথে ভুটভুটি থেকে পড়ে মৃত্যু

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পূর্ত দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ভোলানাথবাবুর ডিউটি পড়েছিল সুন্দরবন কোস্টাল থানার কুমিরমারির পুঁইজালি হাইস্কুলের ১০৮ নম্বর বুথে। সেখানে তিনি ছিলেন তৃতীয় পোলিং অফিসার।

ভোলানাথ হাজরা।

ভোলানাথ হাজরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

ভোটের ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন অন্য কর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু মাঝপথেই ভুটভুটি থেকে নদীতে পড়ে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হল এক ভোটকর্মীর। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গোসাবা থানার গোমর নদীতে। মৃতের নাম ভোলানাথ হাজরা (৪৫)। বাড়ি তালতলা থানা এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পূর্ত দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ভোলানাথবাবুর ডিউটি পড়েছিল সুন্দরবন কোস্টাল থানার কুমিরমারির পুঁইজালি হাইস্কুলের ১০৮ নম্বর বুথে। সেখানে তিনি ছিলেন তৃতীয় পোলিং অফিসার। গত শুক্রবার তালতলার বাড়ি থেকে গোসাবার উদ্দেশে রওনা হন ভোলানাথবাবু। গোসাবা থানার পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার ভোট শেষ হওয়ার পরে কাগজপত্র গুছিয়ে তিনি অন্য ভোটকর্মীদের সঙ্গে রাত আটটা নাগাদ কুমিরমারি ছেড়ে গোসাবা আসার জন্য বেরোন। সকলেই ছিলেন এমভি বৈদ্যনাথ ভুটভুটিতে।

অন্য ভোটকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাঙাবেলিয়ার কাছে আচমকা নদীতে ভারী কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পান তাঁরা। ঘুরে দেখেন, ভোলানাথবাবু ভুটভুটিতে নেই। তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন, কোনও ভাবে নদীতে পড়ে গিয়েছেন তিনি। ওই কর্মীরাই সঙ্গে সঙ্গে গোসাবা থানায় খবর পাঠান। চলে আসে পুলিশ। ভুটভুটির কর্মীদের সাহায্যে রাত প্রায় ১টা নাগাদ উদ্ধার করা হয় ভোলানাথবাবুকে। দুর্ঘটনার খবর পৌঁছয় গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্রের কাছে। তিনি রাঙাবেলিয়া ঘাটে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠান। তাতে করেই ভোলানাথবাবুকে দ্রুত গোসাবা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা।

ভোলানাথবাবুর পরিবারের দাবি, রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ তাঁকে উদ্ধার করা হলেও তাঁদের বাড়িতে খবর দেওয়া হয় সোমবার সকালে। বলা হয়, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভোলানাথবাবু যে মারা গিয়েছেন, তা তখনও পর্যন্ত জানতেন না বলেই দাবি করেছেন তাঁর বাড়ির লোক। এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গোসাবার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান ভোলানাথবাবুর বড় মেয়ে ও জামাই। বিকেলে তালতলার ব্লকম্যান স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একচিলতে ছোট্ট ঘরে পড়শি এবং আত্মীয়দের মাঝে বসে রয়েছেন ভোলানাথবাবুর বৃদ্ধা মা। পাশে স্ত্রী ও বোন। পড়শিরাই জানালেন, রবিবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ ভোলানাথবাবু বাড়িতে ফোন করে জানান, তিনি অন্য ভোটকর্মীদের সঙ্গে বুথ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আপাতত লঞ্চে রয়েছেন। বাড়ি ফিরতে সোমবার সকাল হয়ে যাবে। তাঁর ছোট মেয়ে টুম্পা বলেন, ‘‘লঞ্চের আওয়াজে কিছু শোনা যাচ্ছিল না বলে বাবা বলে, পরে ফোন করবে। কিন্তু রাত ১১টার পরে বাবাকে আর ফোনে পাইনি।’’ টুম্পা আরও জানান, তার পর থেকে যত বার ভোলানাথবাবুকে ফোন করা হয়েছে, তত বারই তাঁর মোবাইল ‘সুইচ্‌ড অফ’ পাওয়া গিয়েছে।

এ দিন টুম্পা বলেন, ‘‘আগে দিদি ফিরুক। বাবা কী ভাবে নদীতে পড়ে গেল, তার পরেই জানা যাবে।’’ পুলিশের অনুমান, ভুটভুটি চেপে আসার সময়ে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ভোলানাথবাবু। কোনও ভাবে ঢেউয়ের ধাক্কায় ঝাঁকুনিতে তিনি পড়ে যান। এ দিন ময়না-তদন্তের পরে ভোলানাথবাবুর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Death River Vote Worker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE