Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিমার ভার সামলান মোরশেদরা

বেশ খাটনির এই কাজ। বিশাল-বিশাল প্রতিমা পালপাড়া থেকে মণ্ডপে-মণ্ডপে পৌঁছবার কাজে তাই ভরসা শক্তপোক্ত চেহারার মোরশেদ-রহিমরাই।

জোর-লাগিয়ে: প্রতিমা উঠছে গাড়িতে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

জোর-লাগিয়ে: প্রতিমা উঠছে গাড়িতে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৬
Share: Save:

তাঁদের কাঁধে চড়েই দেবী প্রতিমা পালপাড়া থেকে ট্রাকে-ট্রলিতে ওঠেন। তাঁদের শরীরে ভর করেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয় মণ্ডপে মণ্ডপে। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার পালপাড়া থেকে দুর্গা প্রতিমা কলকাতার পূজা মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়ার কাজের ফাঁকে মোরশেদ আলি, হোসেন রহমান ও রহিম মণ্ডলেরা অনায়াসেই বললেন, ‘কর্মে আবার ধর্ম কী? এই উৎসব আমাদেরও। ছেলেমেয়েদের বায়না মেনে নতুন জামা কাপড় কিনে দিতে হচ্ছে। ওরাও ঘুরবে মণ্ডপে মণ্ডপে।’

বেশ খাটনির এই কাজ। বিশাল-বিশাল প্রতিমা পালপাড়া থেকে মণ্ডপে-মণ্ডপে পৌঁছবার কাজে তাই ভরসা শক্তপোক্ত চেহারার মোরশেদ-রহিমরাই। শুধু শক্তিই নয়, দরকার হয় নানা কসরতেরও। সে সব জানেন এঁরা। কী করে প্রতিমা ট্রলিতে তুলতে হবে। কোথায় দড়ি, কোথায় বাঁশ দিয়ে চাড় দিয়ে প্রতিমা নামালে অঙ্গহানি হবে না।

শনিবার দেগঙ্গার পালপাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে যেতে এসেছিলে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত, বারাসতের পুজো কমিটির সদস্যেরা। এ দিন ছিল বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। প্রতিমায় জল লাগলে সর্বনাশ। ঠাকুর কী করে ট্রাকে তোলা হবে, তা নিয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছিলেন বারাসতের হেলা বটতলার সরোজিনী সঙ্ঘের সদস্যেরা। এগিয়ে এলেন মিজানুর রহমানেরা। বৃষ্টির জলের ক্ষতি আটকাতে দক্ষ হাতে পলিথিন দিয়ে সপরিবার-দুর্গা প্রতিমা বর্ষাতির মতো করে মুড়ে দেওয়া হল।

মিজানুরের কথায়, ‘‘মায়ের প্রতিমা ভিজে যাবে, তা কি হয়? আমাদের আল্লা, ওঁদের ভগবান। তাই তো যত্ন করে মুড়ে মণ্ডপে নিয়ে যাচ্ছি দুর্গামায়ের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ ওই ক্লাবের সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু মানুষের কাঁধে করে আমাদের প্রতিমা দেগঙ্গা থেকে বারাসতে যাচ্ছে ভাবতেই রোমাঞ্চ হচ্ছে। ওঁরা ছাড়া এটা সম্ভবই হত না। সকলকে সপরিবারে পুজোয় নিমন্ত্রণ করেছি।’’

পালপাড়ায় প্রতিমা কলকাতা-শহরতলির বিভিন্ন মণ্ডপে পৌঁছে দিতে ১০- ১২টি দল কাজ করে। প্রতি দলে ১২-১৪ জন। বৈদ্য সরকার নামে এক প্রতিমা বহনকারী বলেন, ‘‘আমরা কয়েকজন হিন্দু, বাকি সকলেই মুসলিম। ওঁরাই এ কাজে বেশি দক্ষ।’’

হোসেন মল্লিক নামে এক যুবকের কথায়, ‘‘আমরা সারা বছর অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বছরের এই ৫-৬টা দিন প্রতিমা মণ্ডপে পৌঁছনোর কাজ করি। এই কাজে হাজার পাঁচেক টাকার মতো আয় হয়। পুজো আর ইদে পরিবারের নতুন জামা-কাপড় হয়ে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Durga Puja 2018 Idol Weight Muslim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE