Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হবে কবে

নিকাশি নালা লোকালয়ের পাশাপাশি দেখা গেল, খাল-বিল-নদীর জলেও প্লাস্টিকের ক্যারিবাগ পড়ে রয়েছে। তাতে জলে দূষণ ছড়াচ্ছে। বাসিন্দারা জানালেন, মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। মশারি ছাড়া ঘুমনো যায় না। গরু, ছাগলদেরও মশারির মধ্যে রাখছেন কেউ কেউ।

অবরুদ্ধ: নালা ভাসছে প্লাস্টিকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

অবরুদ্ধ: নালা ভাসছে প্লাস্টিকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

বাজারে এখনও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই জিনিসপত্র দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে বাগদায়। নজর নেই প্রশাসনের, অভিযোগ স্থানীয় মানুষের একাংশের।

গত বছর বাগদা ব্লকে জ্বর, ডেঙ্গিতে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। কয়েক জন মারাও যান। তারপরেও মানুষ প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে সচেতন হননি। পুরসভারও এ বিষয়ে আরও কড়া হওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে। বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়ের বলেন, ‘‘বাগদা ব্লকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে ও সাধারণ মানুষকে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন করতে পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। যেখান থেকে ব্লকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ঢুকছে সেগুলি চিহ্নিত করে তা বন্ধ করা হচ্ছে।’’

বাগদা ব্লকের অন্যতম বড় বাজার হেলেঞ্চা। দেখা গেল, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে আনাজ, মাছ বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এক যুবকের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগই ব্যবহার করি। কেউ তো কখনও নিষেধ করেনি।’’ এ দিকে, হেলেঞ্চা বাজারের নিকাশি নালাগুলি আবর্জনায় ভর্তি। তারমধ্যে প্লাস্টিক, থার্মোকলই বেশি পড়ে থাকে। নালা দিয়ে জল সরে না। কালো জল নালা উপচে রাস্তায় চলে আসে হরদম। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের স্তূপ জমে রয়েছে আবর্জনার মধ্যে। তারমধ্যে মশার লার্ভাও রয়েছে বলে চোখে পড়ল। বাগদার বাজারের মুদি ও মিষ্টির দোকানগুলিতেও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। আনাজ-মাছ বিক্রেতারা বলেন, ‘‘কাপড়ের ব্যাগের দাম বেশি। ক্রেতারা বাড়তি টাকা দিয়ে কাপড়ের ব্যাগ নিতে চান না। তা ছাড়া, প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না— প্রশাসনের তরফে এমন কোনও নির্দেশও দেওয়া হয়নি।’’

ইতিমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পুকুরে জল জমতে শুরু করেছে। অনেক বসত বাড়ির আশেপাশে প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ওই সব প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে বৃষ্টির জল জমেছে। ফলে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নিকাশি নালা লোকালয়ের পাশাপাশি দেখা গেল, খাল-বিল-নদীর জলেও প্লাস্টিকের ক্যারিবাগ পড়ে রয়েছে। তাতে জলে দূষণ ছড়াচ্ছে। বাসিন্দারা জানালেন, মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। মশারি ছাড়া ঘুমনো যায় না। গরু, ছাগলদেরও মশারির মধ্যে রাখছেন কেউ কেউ।

কিন্তু পুরসভার দাবি, তাঁরা এলাকা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছেন। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া যাতে না ছড়ায়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুক্লা মণ্ডল বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে কর্মশালা করা হচ্ছে। ওই মহিলারা এলাকার মানুষকে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন করবেন।’’ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসে এখন সাত দিন করে জঙ্গল সাফাই, নিকাশি নালা পরিষ্কার করা, জমা জল সরিয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। ওই সাফাই অভিযানে প্লাস্টিক ও থার্মোকল পরিষ্কার করা হচ্ছে। পঞ্চায়েত স্তরে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে মানুষ সচেতন করতে প্রচার আলোচনা শুরু হয়েছে।

তবে রাতারাতি ব্লক থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা ও সব মানুষকে সচেতন করা সম্ভব নয় বলে প্রশাসনের কর্তারাও মনে করছেন। মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে বলে তাঁদের মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Use Plastic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE