Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তারখানায় গুলি করে মহিলাকে খুন

সাজেদা এলাকায় ডাকাবুকো হিসেবে পরিচিত। পাড়ার বিভিন্ন কাজে তাঁর ডাক পড়ে।

এই চেম্বারেই গুলি চলে। ইনসেটে, সাজেদা বিবি। নিজস্ব চিত্র

এই চেম্বারেই গুলি চলে। ইনসেটে, সাজেদা বিবি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব স‌ংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

খুনিদের লক্ষ্য যে তিনিই ছিলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত পুলিশ। কিন্তু টিটাগড়ের সাজেদা খাতুন (৪০) কী কারণে খুন হলেন, তা খুঁজতে গিয়ে একাধিক তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। স্বভাবতই দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে একাধিক জট ছাড়াতে হচ্ছে তাদের। তবে পুলিশ নিশ্চিত, দিন দু’য়েকের মধ্যেই খোঁজ মিলবে খুনিদের। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে দু’জন দুষ্কৃতী মিলে সাজেদাকে খুন করে।

সাজেদা টিটাগড় উড়নপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর স্বামী মহম্মদ শামিম পাড়াতেই একটি ছোট দোকান চালান। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বছর সতেরোর ছোট মেয়ে তাঁদের সঙ্গেই থাকেন। সাজেদা এলাকায় ডাকাবুকো হিসেবে পরিচিত। পাড়ার বিভিন্ন কাজে তাঁর ডাক পড়ে।

কী ঘটেছিল শনিবার রাতে?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজেদার এক পড়শি কিশোর অসুস্থ ছিল। তার মা এবং ওই কিশোরকে পাড়ার হোমিয়োপ্যাথ চিকিৎসক মহম্মদ ইউনুসের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন সাজেদা। তখন রাত সাড়ে ন’টা। পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময় আচমকা দুই যুবক চিকিৎসকের চেম্বারে ঢুকে পড়ে। আচমকা দু’জনকে ওই ভাবে চেম্বারে ঢুকতে দেখে চমকে যান সকলেই।

পুলিশ জানিয়েছে, কাউকে কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়ে তাদের একজন রিভলভার বের করে খুব কাছ থেকে সাজেদাকে লক্ষ্য করে পর পর দু’টি গুলি চালায়। গুলি লাগে সাজেদার মুখ ও নাকে। ওই অবস্থায় সাজেদা চেম্বার থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুষ্কৃতীরা সাজেদাকে ফের দু’টি গুলি করে ছুটে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলির শব্দ পেয়ে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু রাস্তাতে এক মহিলাকে ওই ভাবে গুলি করতে দেখে আর কেউ এগিয়ে আসেননি। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের মুখ ঢাকা না থাকলেও তাদের কেউ তাঁর চেনা নয়। তবে পুলিশ নিশ্চিত, দুষ্কৃতীরা স্থানীয়।

কিন্তু কেন খুন হলেন সাজেদা?

এখানেই উঠে আসছে নানান কারণ। সাজেদা জমি-বাড়ির দালালি করতেন। পাড়ারই এক যুবকের জমিতে ফ্ল্যাটবাড়ি করতে চেয়েছিল। ওই যুবকের সঙ্গে সাজেদার সম্পর্ক খুবই ভাল। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই জমিটি সাজ‌েদাই ওই প্রমোটারকে দিতে রাজি হননি। তিনি জানান, ওই যুবক নিজেই প্রমোটারি করবেন। তা নিয়ে ওই প্রমোটারের সঙ্গে সাজেদার গোলমাল বেধে থাকতে পারে। তার জেরেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ছক করা হয়। ওই যুবকের সঙ্গে সাজেদার সম্পর্ক যেমন ভাল, তেমনই তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গেও ওই যুবকের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে স্থানীয় কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন। তবে এই কারণের জেরে খুন বলে পুলিশ এমন কোনও প্রমাণ এখনও পায়নি। যে যুবকের কথা বলা হচ্ছে, ঘটনার সময়ে ব্যক্তিগত কাজে তিনি বীরভূমের রামপুরহাটে ছিলেন।

আরও একটি কারণ পুলিশের নজরে এসেছে। সম্প্রতি সাজেদার বাড়ির ছাদে টাওয়ার বসাতে চেয়েছিল একটি মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। কিন্তু তাতে রাজি হননি সাজেদা। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমালও হয়েছিল। সেই কারণেই খুন কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। কিছু সূত্র আমাদের হাতে এসেছে। সেই সূত্র ধরে তদন্ত এগোচ্ছে।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে দুষ্কৃতীদের মুখের স্কেচ আঁকার কথাও ভাবছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Murder Firing Doctor's Chamber Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE