Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হ্যামের সাহায্যে বাড়ি ফিরলেন মহিলা 

কামিনী জানিয়েছেন, মাস দশেক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। আগে কখনও বাইরে যাননি তিনি। পাড়ার অনেকে গঙ্গাসাগর আর প্রয়াগরাজে তীর্থে বেরোচ্ছেন জেনে ছেলেদের কাছে অনুমতি জোগাড় করে তিনিও ওই দলের সঙ্গী হন। রবিবার তাঁরা সাগরদ্বীপ পৌঁছন। 

কামিনী জোশি। —নিজস্ব চিত্র

কামিনী জোশি। —নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩১
Share: Save:

পা ভেঙে পড়ে ছিলেন গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিতে। সঙ্গে কেউ নেই। ছিল না লটবহরও। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মাঝবয়সী মহিলা বারবার বাড়ি ফেরার জন্য কাঁদছিলেন। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে চলন্ত গাড়ি থেকে ভাঙা পা নিয়েই ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি।

হ্যাম রেডিয়ো ক্লাব এবং মধ্যপ্রদেশের পুলিশের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত বাড়ির লোকের খোঁজ মিলেছে মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডবার বাসিন্দা কামিনী জোশির। তিনি জানিয়েছেন, পা ভেঙে যাওয়ার পরে পাড়ার লোকেরা তাঁকে ফেলে প্রয়াগরাজের অর্ধকুম্ভে পাড়ি দিয়েছেন।

খাণ্ডবার পুলিশ সুপার রুচি বর্ধন মিশ্র জানিয়েছেন, পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হচ্ছে কামিনীকে বাড়ি ফেরানোর জন্য। আপাতত পুলিশ প্রহরায় ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

কামিনী জানিয়েছেন, মাস দশেক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। আগে কখনও বাইরে যাননি তিনি। পাড়ার অনেকে গঙ্গাসাগর আর প্রয়াগরাজে তীর্থে বেরোচ্ছেন জেনে ছেলেদের কাছে অনুমতি জোগাড় করে তিনিও ওই দলের সঙ্গী হন। রবিবার তাঁরা সাগরদ্বীপ পৌঁছন।

সোমবার পুণ্যস্নানের পরে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের প্রয়াগরাজের দিকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভাঙে। কামিনী জানান, সঙ্গীরা জানিয়ে দেন, এই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে থেকে যেতেও রাজি হননি কেউ। খাণ্ডবার ট্রেনে তুলে দিতে বললেও ভাঙা পায়ের কামিনীকে সাগরতটে রেখে চলে যান সকলে।

মঙ্গলবার রাতে সেখানে পড়ে কাঁদছিলেন তিনি। কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানেই রাত কাটে তাঁর। সকালে প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁকে সেখানকার অস্থায়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিজের নাম আর বাড়ির এলাকা ছাড়া আর কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।

তখনই খবর দেওয়া হয় হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবকে। বেলার দিকে তাঁকে কাকদ্বীপ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কামিনী জানান, তাঁর ধারণা হয়েছিল, কোনও খারাপ চক্রের খপ্পরে পড়েছেন তিনি। আর কোনও দিন বাড়ি ফেরা হবে না তাঁর। তাই গাড়ি যখন কচুবেড়িয়ার কাছে, গতি কিছুটা কমতেই আচমকা গেট খুলে ঝাঁপ মারেন তিনি।

পিছনেই আসছিল একটি গাড়ি। প্রায় ধাক্কা লাগতে যাচ্ছিল। কোনও রকমে চালক গাড়ি থামান। ওই অবস্থাতেই পালানোর চেষ্টা করেন মহিলা। কোনও রকমে তাঁকে ফের গাড়িতে তোলা হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস ততক্ষণে খাণ্ডবার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলেছেন। তাঁর সঙ্গে কামিনীর কথা বলিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপারকে কামিনী জানান, তাঁর তিন ছেলে। তিন ছেলে এবং গ্রামের মুখিয়ার নাম বলেন তিনি। পুলিশ সুপার তাঁকে আশ্বস্ত করেন, তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেবেন। তাঁর জন্য পুলিশ কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। খাণ্ডবার পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা আশ্বস্ত হন কামিনী। এ দিকে, গ্রামের মুখিয়ার নাম ধরে খোঁজ করতেই মুখিয়ার পুরো ঠিকানা পাওয়া যায়।

রুচি বর্ধন জানান, কামিনীর বাড়ি লালচৌকি এলাকার রামনগর মন্টি কলোনিতে। হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে ছেলে শুভম জোশির সঙ্গে কামিনীর কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের দলের সঙ্গে শুভমকেও পাঠানো হচ্ছে মাকে নিতে। ছেলের সঙ্গে কথা বলার পরে হাসি ফোটে কামিনীর মুখে। তিনি বলেন, ‘‘আর কোনও চিন্তা নেই। বুঝতে পারিনি, ভাল মানুষের হাতে পড়েছিলাম। আসলে আমার মালপত্র হারিয়ে খুব অসহায় লাগছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HAM Radio Gangasagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE