ন্যাপকিন বিষয়ে চলছে বোঝানো। —নির্মাল্য প্রামাণিক
বছর তিরিশের মহিলাটি প্রথম থেকেই ঋতুস্রাবের সময়ে কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করে আসছেন। বাড়ি গাইঘাটা ব্লকের চাঁদপাড়ায়। ঋতুস্রাবের সময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করাই যে উচিত, সে সম্পর্কে এতদিন তাঁর কোনও ধারণাই ছিল না।
বৃহস্পতিবার সকালে ওই মহিলা এসেছিলেন চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাঁকে বোঝান, ঋতু চলাকালীন কেন স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উচিত। কাপড় ব্যবহার করলে নানা রোগের সংক্রমণ হতে পারে বলেও মহিলাকে জানানো হয়। পরে মহিলা বলেন, ‘‘এতদিন ছেঁড়া কাপড় ব্যবহার করে এসেছি। জানতামও না ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে রোগ সংক্রমণ হতে পারে। এখন থেকে ন্যাপকিন ব্যবহার করব। তবে আর্থিক কারণে সবসময় ন্যাপকিন ব্যবহার করতে পারব বলে মনে হয় না।’’
ঋতুস্রাবের সময়ে মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে গাইঘাটা ব্লকের মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা এখনও কম। তবে ব্লকের পড়ুয়া মেয়েদের মধ্যে ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা অনেকটাই বেড়েছে।
গাইঘাটা ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ব্লকের জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৭০ হাজার। এখন সংখ্যাটা যদিও আরও বেশি। ওই জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ মহিলা। গাইঘাটার বিএমওএইচ ভিক্টর সাহা বলেন, ‘‘ব্লকের পড়ুয়া মেয়েদের ৮৫ শতাংশ ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। পড়ুয়া বাদে সাধারণ মহিলাদের ৪০ শতাংশ ন্যাপকিন ব্যবহার করেন।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে অবস্থাটা ভয়াবহ ছিল। ওই সময়ে সাধারণ মহিলাদের মাত্র ১৩ শতাংশ নিয়মিত ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন।
কী ভাবে পরিস্থিতি বদলাল?
স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক হাসপাতালে সপ্তাহে তিনদিন মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা নিয়ে ক্লিনিকের আয়োজন হয়। সেখানে মেয়েদের ন্যাপকিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। সপ্তাহে তিনদিন এলাকার স্কুলগুলিতে গিয়ে চিকিৎসকেরা ঋতুস্রাব বিষয়ে তাঁদের সচেতন করেন। ব্লকের বেশ কিছু স্কুলে বসেছে ভেন্ডিং মেশিন। অতীতে স্কুলে এসে হঠাৎ ঋতুস্রাব হওয়ায় বাড়ি ফিরে যেতে হত ছাত্রীদের। তা ছাড়া, বাড়িতেও অনেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করত না। সচেতনতার অভাব ছিল ছাত্রী ও তাদের পরিবারের মহিলাদেরও। এখন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে।
কয়েক মাস আগে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পক্ষ থেকে ঝাউডাঙার স্কুলে বসানো হয়েছিল অটোমেটিক স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিন। তারপর থেকে ছাত্রীদের মধ্যে ন্যাপকিন বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার বলেন, ‘‘এখন ছাত্রীরা নিজেরা স্কুল থেকে ন্যাপকিন কিনছে। বাড়ির মহিলাদের জন্যেও নিয়ে যাচ্ছে। স্কুলের পক্ষ থেকেও ছাত্রীদের বোঝানো হয়েছে।’’চাঁদপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়াসংখ্যা প্রায় ১৬০০। স্কুলে ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা ঝুমা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছাত্রীরা এখন ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।’’ গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘ব্লকের একটি কলেজ ও কয়েকটি স্কুলে ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। ন্যাপকিন ব্যবহার বিষয়ে বাড়ির মহিলাদের সচেতন করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।’’
কেন মহিলারা ন্যাপকিন ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নন?
কয়েকজন মহিলার কথায়, ‘‘আর্থিক কারণে ন্যাপকিন কেনা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া নিজেরা দোকানে গিয়ে কিনতেও পারি না। সংকোচ হয়।’’ তাঁরা জানান, তাঁদের অধিকাংশই এখনও কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
অনেকে এমনও জানান, তাঁরা কয়েকবার ন্যাপকিন ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু তাতে হ্যাপা বেশি। ঋতুস্রাবের সময়ে একটি ন্যাপকিন দিয়েও অনেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।ঋতুস্রাব নিয়ে এখনও মেয়েদের মধ্যে রয়ে গিয়েছে নানা ছুঁতমার্গ।
অনেকেই ঋতু চলাকালীন নিজেদের অপবিত্র মনে করেন। বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে মেয়েদের সচেতন করতে আরও বেশি করে পদক্ষেপ করা হবে। পদক্ষেপ করা হবে এ সংক্রান্ত ভুল ধারণা দূর
করার ক্ষেত্রেও। ’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy