অসীম মণ্ডল।
স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ফোনটা কেটে গিয়েছিল বছর উনত্রিশের যুবকের। স্ত্রী আবার ফোন করলেও স্বামীর মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেননি। এর কিছু ক্ষণ পরে ওই রাতেই খবর এল, সুন্দরবনে ঘুরতে যাওয়া সেই যুবক নৌকায় ঘুরতে বেরোনোর পরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, সুন্দরবনের জঙ্গল লাগোয়া রায়মঙ্গল নদীতে ভাসমান নৌকা থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই যুবকের নাম অসীম মণ্ডল ওরফে ভিক্টর। তিনি দক্ষিণেশ্বরের আড়িয়াদহ দোলপিঁড়ি এলাকার বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে ওই যুবক নিখোঁজ হওয়ার পরে শনিবার সকাল থেকে নদীতে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালালেও রাত পর্যন্ত অসীমের হদিস মেলেনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, রাতে নৌকার ছাদে উঠে কোনও ভাবে পা ফস্কে জলে পড়ে প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছেন ওই যুবক। অন্যান্য সম্ভাবনার কথাও অবশ্য উড়িয়ে দেয়নি পুলিশ। ওই নৌকার আশপাশে যে সমস্ত নৌকা ছিল, তাদের যাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন হেমনগর উপকূলবর্তী থানার তদন্তকারীরা। তবে এই ঘটনার পরে বিপজ্জনক ভাবে নৌকায় রাত কাটানো নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠেছে।
এ দিন দুপুরে দোলপিঁড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিয়ালদহ আদালতের টাইপিস্ট অসীমের দোতলা বাড়ির সামনে লোকজনের জটলা। পরিজনেরা জানান, শুক্রবার সকালে অসীম ও তাঁর এক আত্মীয় প্রশান্ত মণ্ডল-সহ ২৫ জনের একটি দল সুন্দরবনে বাঘ দেখতে রওনা দেয়। তাঁরা ধামাখালি হয়ে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগরে পৌঁছন। কিন্তু হেমনগর গেস্ট হাউসে ঘর না পেয়ে অসীমরা নৌকাতেই থাকছিলেন। ওই গেস্ট হাউসের সামনেই রায়মঙ্গল নদী। অন্য পাড়ে ঘন জঙ্গল। পুলিশ জানায়, অসীমের সঙ্গীরা দাবি করেছেন, রাত ১০টা নাগাদ নৌকার ছাদে উঠেছিলেন ওই যুবক। দীর্ঘক্ষণ তিনি নামছেন না দেখে প্রশান্তবাবুরা নৌকার উপরে গিয়ে দেখেন, কেউ কোথাও নেই। এর পরেই অসীমের বাড়িতে খবর দেওয়ার পাশাপাশি হেমনগর উপকূলবর্তী থানায় খবর দেন প্রশান্তবাবুরা।
খবর পেয়ে ওই রাতেই অসীমের বাবা ও দাদা অমিত-সহ পরিজনেরা হেমনগরে রওনা দেন। অন্য দিকে, হেমনগর পুলিশ-সহ ঝিঙাখালি ফরেস্ট অফিসের লঞ্চ অসীমের খোঁজে নদীতে নামে। অসীমের স্ত্রী চম্পাদেবী জানান, ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ফোন করে নিজেদের পৌঁছনোর কথা জানিয়েছিলেন ওই যুবক। এর পরে রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ চম্পাদেবীই ফোন করেছিলেন অসীমকে। সেই সময়ে অসীম তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘‘পরের বার তোমাকে আর ছেলেকে এখানে নিয়ে আসব। অসাধারণ সুন্দর জায়গা।’’
এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে চম্পাদেবী বলেন, ‘‘আমার ফোনের ব্যালান্স শেষ হয়ে যেতেই লাইন কেটে যায়। ব্যালান্স ভরে কয়েক মিনিটের মধ্যে আবার ফোন করেও লাইন পেলাম না।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ঘুরতে যাওয়ার সময়ে ছেলে একটা জিনিসের আবদার করেছিল। ও বলেছিল, রবিবার বাড়ি আসার সময়ে নিয়ে আসবে। কী যে হয়ে গেল, ভাবতেও পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy