জনতার ক্ষোভ। ছবি: নির্মল বসু।
একে তো চোলাইয়ের ঠেকের জ্বালায় বিরক্ত মানুষ। তার উপরে শুরু হয়েছে মরা জন্তুর মাংস কেটে ড্রাম-বন্দি করার ব্যবসা। সব মিলিয়ে তিতিবিরক্ত মানুষ। অভিযোগ, বহু বার পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও বিশেষ কোনও লাভ হয়নি। এ বার নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিলেন এলাকার লোকজন। ভাঙচুর চালানো হল চোলাইয়ের ঠেকে। মাংসের ব্যবসার জায়গাতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় বসিরহাটের ইছামতী নদী-সংলগ্ন শ্মশানঘাট এলাকায়। খবর পেয়ে বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র বাহিনী নিয়ে পৌঁছন। অবৈধ কাজকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে শান্ত হয় জনতা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট শ্মশানের পাশে দিয়ে পুরাতন বাজারের গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে ইছামতী। শ্মশানের পিছনে নদীর ধার বরাবর বসে চোলাইয়ের ঠেক। মাঝে মধ্যেই মদের আসরে পুলিশ হামলা চালালেও স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলের অভিযোগ, পুলিশি হামলায় দু’চার দিন বন্ধ থাকার পরে ফের একই ভাবে রমরমিয়ে শুরুই হয় চোলাইয়ের কারবার। গত কয়েক বছর থেকে আবার শুরু হয়েছে মরা জন্তুর মাংস কেটে ড্রাম ভর্তি করে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবসা। তাতে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়।
বছর খানিক আগে একবার এ সব নিয়ে বাজার সমিতির পক্ষে থানা-পুলিশ করার পরে কিছু দিন সব বন্ধ ছিল। কিন্তু ফের শুরু হয়েছে। পুরাতন বাজারে যেতে অনেককেই শ্মশানঘাটের পিছন দিয়ে যাওয়া রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। তাঁদের অভিযোগ, একে চোলাইয়ের গন্ধে নাজেহাল, তার উপরে মরা জন্তুর মাংসের ব্যবসা শুরু হওয়ায় দুর্গন্ধে টেঁকা দায় হয়ে উঠেছে। পুলিশ-প্রশাসনের নজরে আনা সত্ত্বেও সকলেই উদাসীন।
এ দিন সকালে একদল ক্ষুব্ধ জনতা বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা চালায় ঠেকে। নদীর ধারে একটি ইটের দেওয়াল, অ্যাসবেস্টারের চাল দেওয়া বড় ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জিনিসপত্র নদীর জলে ছুড়ে ফেলে দেয় সকলে। থানা থেকে খানিক দূরে এই ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এলে এলাকার ব্যবসায়ীরা তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে সঞ্জয় ঘোষ, আজাদ রহমান গাজি, প্রদীপ মণ্ডলরা বলেন, “পরিবেশ দূষণ করে রাস্তার পাশে মরা জন্তুর মাংস কেটে ব্যারেল ভর্তি করে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবসা চলছে। দুর্গন্ধে টেঁকা দায়। এ সবের জন্য যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনই দুষ্কৃতীদের উপদ্রব বাড়ছে। সব জানা সত্ত্বেও প্রশাসনের ভূমিকা অনেকটা দর্শকের। থানায় আধিকারিক বদল হলে পুলিশ ক’দিন নড়েচড়ে বসে। ফের পরিস্থিতি যে কে সে-ই। সে কারণেই জনতা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন।”
বসিরহাট পুরাতন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অজয় রায় বলেন, “একে নদীর বাঁধ উচুঁ না করায় জোয়ারে ডকঘাট এলাকায় জল ঢুকে বড় রকম ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তার উপরে মরা পশু কাটার ব্যবসা শুরু হওয়ায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হচ্ছেন সকলে। চোলাই খেয়ে মাতলামো করার প্রতিবাদ করলে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতাকেও। এ সব কারণে দিন দিন বাজারে খদ্দেরের সংখ্যা কমছে। ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy