আসানসোলের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্কুল চলছে খোলা জায়গায়। ছবি: শৈলেন সরকার।
চওড়া হবে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক। তাই ভাঙা পড়েছে স্কুল চত্বরের পাঁচিল। চলছে স্কুলের দালানঘর ভাঙার তোড়জোড়। খুলে নেওয়া হয়েছে শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা। মাঠে বসে পড়াশোনা করতে বাধ্য হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। কয়েক দিন ধরে এ ভাবেই চলছে আসানসোলের পলিটেকনিক অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুল।
পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এই স্কুলটির এমন পরিস্থিতি জেনে সম্প্রতি সেখানে গিয়েছিলেন আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস। তিনি জানান, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৬ সালে স্কুলটি তৈরি হয়। ধাদকা লাগোয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে রয়েছে স্কুলটি। মহকুমাশাসক জানান, ধাদকা পলিটেকনিক কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া জমিতে কলেজ চত্বরেই স্কুলটি তৈরি হয়। ছাত্রছাত্রী বাড়তে থাকায় ২০০৯-১০ সালে সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকায় দুটি শ্রেণিকক্ষ-সহ নতুন ভবন তৈরি করা হয়। এখন পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১৩০ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন চার জন। পাঁচটি শ্রেণির জন্য বরাদ্দ পাঁচটি ঘর।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, নির্বিঘ্নেই পঠনপাঠন চলছিল এত দিন। কিন্তু হঠাৎ বাধ সেধেছে জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ প্রকল্প। প্রধান শিক্ষিকা জুলু মণ্ডল বলেন, “দিন কয়েক আগে স্কুলে এসে দেখি, সীমানা পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আমি বাধা দিলে তাঁরা জানান, রাস্তা চওড়া হবে। স্কুলের দালানঘরও ভেঙে ফেলা হবে। আমি অভিভাবকদের ডেকে তখনকার মতো কাজ আটকাই।” তাঁর দাবি, পাঁচিল বা ভবনটি ভেঙে দেওয়ার আগে তাঁদের আগাম কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি তিনি প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের কর্তাদেরও জানিয়েছেন।
স্কুলের ভবন ভাঙা না হলেও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সীমানা পাঁচিল। নতুন ভবনের দরজা-জানালাও খুলে ফেলা হয়েছে। ফলে, সেখানে বসতে পারছে না পড়ুয়ারা। আবার পুরনো ভবনে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পড়ুয়ারা খোলা আকাশের নীচে মাঠে বসতে বাধ্য হচ্ছে। শিক্ষিকারাও সেখানে দাঁড়িয়েই পড়াচ্ছেন। স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রধান শিক্ষিকা জানান, পর্যাপ্ত ফাঁকা জমি এখনও মেলেনি। কোথায় স্কুলের নতুন ভবন তৈরি হবে, বোঝা যাচ্ছে না। অভিভাবকেরা দাবি করেন, আদৌ স্কুলটি থাকবে কি না তা-ই নিশ্চিত নয়। শুভাশিস বিশ্বাস নামে এক অভিভাবকের কথায়, “আমরা কয়েক জন রোজ পাহারা দিচ্ছি, যেন ভেঙে না দেয়। কিন্তু কত দিন এ ভাবে চলবে জানি না।”
শিক্ষা দফতরের সহকারী স্কুল পরিদর্শক উত্তম মণ্ডল বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যেহেতু এই জমি পলিটেকনিক কলেজ কর্তৃপক্ষের, তাই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ তাঁদের আগাম জানিয়েছেন।” উত্তমবাবু আরও জানান, তাঁরাও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুল ভবন তৈরির ব্যবস্থা না করে ভাঙা যাবে না।
কলেজ কর্তৃপক্ষ সব কিছু জানার পরেও ওই স্কুল বা শিক্ষা দফতরকে কিছু জানালেন না কেন? কলেজের অধ্যক্ষ শৈবাল আইচ বলেন, “সরকারি আধিকারিক হিসেবে আমাকে অনেক কিছুই করতে হয়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে জানানোর এক্তিয়ার আমার নেই।” মহকুমাশাসক অমিতাভবাবু জানান, স্কুলের ভবন এ ভাবে হঠাৎ ভেঙে দেওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা চলছে। দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy