ঘর-হারা: বনজেমারিতে মঙ্গলবার সকালে। নিজস্ব চিত্র
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সালানপুরে বনজেমাহারি খনি লাগোয়া অঞ্চল দখলমুক্ত করল ইসিএল। দখল উচ্ছেদের বিজ্ঞপ্তিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরেই এলাকা তপ্ত ছিল। মঙ্গলবার সকালে অভিযান শুরুর সময়ে খানিক অশান্তি তৈরি হয়। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করে ইসিএল এবং স্থানীয় প্রশাসন। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, উচ্ছেদ অভিযান ঠিক ভাবে হওয়ায় আগামী চার বছরের জন্য খনির উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত হল। তবে এ দিন উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করা হবে না বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ইসিএলের বড় খোলামুখ খনিগুলির মধ্যে অন্যতম এই বনজেমাহারি। ইসিএল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি খনি সম্প্রসারণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেই কাজে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান বেআইনি ভাবে বসবাসকারীরা। খনি লাগোয়া ভুঁইয়াপাড়া ও নোনিয়া ধাওড়ায় প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ইসিএলের জমিতে বাস করছেন হাজার দেড়েক বাসিন্দা। আগে খনি কর্তৃপক্ষ কয়েক বার ওই অঞ্চল দখলমুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এলাকাবাসীর বাধায় ফিরে আসতে হয়েছে। শেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযানে নামে প্রশাসন। তার আগে দু’দিন ধরে উচ্ছেদের প্রতিবাদে ও পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসনের কাছেও বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু কোনও তরফেই পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস পাননি তাঁরা।
মঙ্গলবার সকালে প্রচুর পুলিশ এবং সিআইএসএফের ঘেরাটোপে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। শুরুতে কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়। তবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকায় বিক্ষোভ বড আকার নেয়নি। অনেক বাসিন্দা আবার ভোর থেকেই ঘর খালি করে অন্যত্র চলে যান। ওই এলাকায় চারটি সরকারি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ছিল। এ দিন সেগুলিও ভেঙে ফেলা হয়। ভগ্নস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রগুলির তত্ত্বাবধায়ক মৌসুমী দত্ত, শ্যামশ্রী সরকার, বনশ্রী মাজিরা বলেন, ‘‘আজ সব ভেঙে ফেলা হবে তা আমরা জানতাম না। এর পরে কোথায় যাব জানি না!’’ সালানপুরের বিডিও তপনকুমার সরকার বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে আলোচনা করছি। এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’
ওই জায়গাতেই থাকতেন বাসুদেবপুর জেমারি পঞ্চায়েত সদস্য রামঅবতার নোনিয়া। এ দিন সকালে দেখা যায়, তিনি নিজের ঝুপড়ি খালি করে জিনিসপত্র গোছাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিহারে নিজের দেশের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় হাজার দেড়েক বাসিন্দার মধ্যে প্রায় সাতশো জনের ভোটার কার্ড রয়েছে।
গোটা এলাকা উচ্ছেদ করার পরে যন্ত্র দিয়ে এ দিনই জমি সমতল করে দেয় ইসিএল। শান্তিপূর্ণ ভাবে অভিযান শেষ হওয়ায় খুশি খনিকর্তারা। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, ‘‘এ বার খনি সম্প্রসারণ হবে।’’ তিনি জানান, এই এলাকায় ভূগর্ভে প্রায় ১০ বছরের কয়লা মজুত আছে। প্রথম পর্যায়ে চার বছরের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ছ’বছরের প্রকল্প হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy