সিএলডব্লিউ-তে বিক্ষোভ। (ইনসেটে) স্লোগান প্ল্যাকার্ডে। নিজস্ব চিত্র
অন্য দিন এই সময়ে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন নানা কাজে। কিন্তু এ দিন সেই প্রায় দশ হাজার কর্মী কালো পতাকা আর প্ল্যাকার্ড হাতে শুরু করেন বিক্ষোভ। বিক্ষোভের মেজাজ একটাই, ‘কারখানাকে কর্পোরেট করা চলবে না।’ শুক্রবার চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসে (সিএলডব্লিউ) প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
গত ১৮ জুন সিএলডব্লিউ-কে ‘কর্পোরেট’ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয় রেল বোর্ড। সে বিষয়ে কারখানার জিএম প্রবীণকুমার মিশ্রের পরামর্শও চাওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কারখানার বর্তমান শ্রমিক সংখ্যা, সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ, সংস্থার ভবিষ্যৎ প্রভৃতি বিষয়ে সমীক্ষা চালাবে রেলের একটি সংস্থা। বিজ্ঞপ্তির কথা চাউর হওয়ার পরেই সংস্থার স্টাফ কাউন্সিল ও শ্রমিক সংগঠনগুলি অভিযোগ করে, এ সব পদক্ষেপ করে আসলে কারখানাকে বন্ধ করা হবে অথবা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে সিটু, আইএনটিইউসি-সহ কারখানার ১৩টি শ্রমিক সংগঠন ও স্টাফ কাউন্সিল নেতৃত্ব দিন দশেক আগে ‘সেভ সিএলডব্লিউ জয়েন্ট অ্যাকশান কমিটি’ গড়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন।
সেই কমিটির নেতৃত্বেই এ দিন বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংস্থার প্রায় দশ হাজার কর্মী কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ-অবস্থান শুরু করেন। প্রশাসনিক ভবনে জিএম-কে ঢুকতে দেখে বিক্ষোভের সুর আরও চড়ে। রেল নিরাপত্তা বাহিনী জিএম-কে পাহারা দিয়ে ভিতরে নিয়ে যান।
বিক্ষোভে কারখানার শ্রমিকেরা ছাড়াও যোগ দেন রূপনারায়ণপুর, জামতাড়া, মিহিজাম-সহ লাগোয়া নানা এলাকার ব্যবসায়ী, অটো, রিকশা চালকেরা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, কারখানা বন্ধ হলে বা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হলে শ্রমিক ছাঁটাই হবে। বিক্ষোভে যোগ দেওয়া মিহিজামের অটো চালক বিনোদ কুশওয়া বলেন, ‘‘কারখানা আছে বলে করে খাচ্ছি। কারখানা না থাকলে আমরা কোথায় যাব।’’ আইএনটিইউসি অনুমোদিত ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান রেলওয়ের জোনাল সম্পাদক স্বপন লাহা বলেন, ‘‘কারখানা বন্ধ হলে এলাকায় বেকারত্ব বাড়বে। গোটা অঞ্চলের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।’’ একই আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিটু অনুমোদিত লেবার ইউনিয়নের নেতা রজীব গুপ্তও। তিনি জানান, কারখানার সামাজিক দায়বদ্ধ তহবিল থেকে এলাকায় নানা উন্নয়নের কাজ করা হয়। কারখানার কিছু হলে সে সবও বন্ধ হয়ে যাবে। অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক সৌমেন দাস বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে।’’
পরে কারখানার জিএম প্রবীণকুমার মিশ্রকে স্মারকলিপি দেন বিক্ষোভকারীরা। কারখানার তরফে প্রিন্সিপাল চিফ পার্সোন্যাল ম্যানেজার বিকে সিংহ জানান, স্মারকলিপিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। এর পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy