Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রক্তাক্ত দেহ, খোঁজ নেই দাদা-বৌদির

পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই এলাকায় মৃৎশিল্পী বলে পরিচিত। সর্বমঙ্গলাবাড়ি থেকে ভাতছালায় বাঁকা সেতুতে ওঠার মুখে তাঁদের মাটির জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে।

শোক: ছেলে হারিয়ে কান্না। শনিবার বর্ধমানের কাঞ্চননগরে। ছবি: উদিত সিংহ

শোক: ছেলে হারিয়ে কান্না। শনিবার বর্ধমানের কাঞ্চননগরে। ছবি: উদিত সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

দু’সপ্তাহ পরে বিয়ে হওয়ার কথা। তার আগেই বাড়ির ভিতর কলতলার কাছে রক্তাক্ত দেহ মিলল এক যুবকের। শনিবার সকালে বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরের মন্তেশ্বরতলার লিচু বাগানে বিজয় পণ্ডিত (২৪) নামে ওই যুবকের দেহ মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, ভাইয়ের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই আড়াই বছরের সন্তানকে নিয়ে দাদা দিলীপ পণ্ডিত, বৌদি নীলম ‘বেপাত্তা’।

মৃতের মা মালতীদেবীর দাবি, ‘‘বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পর থেকেই দাদা-বৌদির সঙ্গে অশান্তি শুরু হয় বিজয়ের। বৌমা নীলমের আশঙ্কা ছিল, বিয়ের পরে সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাবে। সে নিয়েই দুই ভাইয়ের মধ্যে গোলমাল।’’

পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই এলাকায় মৃৎশিল্পী বলে পরিচিত। সর্বমঙ্গলাবাড়ি থেকে ভাতছালায় বাঁকা সেতুতে ওঠার মুখে তাঁদের মাটির জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। মালতীদেবীর দাবি, তিনি লিচুবগানের বাড়িতে থাকেন না। মেয়ের কাছে ভাতছালায় থাকেন। শুক্রবার দিনভর নাতি তাঁর কাছেই ছিল। সন্ধ্যার সময় বড় ছেলে দিলীপ নাতিকে নিতে আসে। তাঁর দাবি, “আমিই বিজয়কে বলি মোটরবাইকে করে দাদা-ভাইপোকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসতে। রাত ৯টার সময়েও বিজয় আসছে না দেখে কাঞ্চননগরের বাড়িতে যাই। ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া পাইনি। তখন পড়শি যুবকেরা পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে দেখে বিজয় কলতলায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বড় ছেলেরা কেউ নেই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবে বারবার পড়শিদের সঙ্গে কথা বলার পরে পুলিশের অনুমান, মালতীদেবী কিছু বিষয় লুকিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের ধারণা, রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে খুন হয়েছেন বিজয়। তার পরেই দাদা-বৌদি বাড়ির মূল দরজা লাগিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের মাথার মাঝ বরাবার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়াও গোটা শরীরে ১৫-১৬টি জায়গায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর চিহ্নও রয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের এক চিকিৎসকের দাবি, “ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আঙুল কেটে গিয়েছে মৃতের। আমাদের ধারণা, মৃত যুবক ধারালো অস্ত্রের হাত থেকে বাঁচার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। আর আঘাতকারী প্রচন্ড ক্ষোভ ও রাগ নিয়ে আক্রমণ করেছেন।’’ পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের সঙ্গে খুনের পিছনে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কও থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৮ ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে একতলা বাড়িটি ঘেরা। ওই বাড়ির ভিতর কলতলায় দেহটি উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। চারিদিকে চাপচাপ রক্ত। মৃতের ঘর লন্ডভন্ড। বারান্দায় গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে উঠোনে সাইকেল, মোটরবাইক উল্টে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন ধরে ওই বাড়িতে দু’ভাইয়ের মধ্যে প্রচন্ড অশান্তি চলছিল। এ দিনও চিৎকারের আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু নিত্যদিনের অশান্তি ভেবে কেউ গা করেননি। রাত পর্যন্ত পুলিশ দাদা-বৌদির খোঁজ পায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE