Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকেও উজ্জ্বল জেলার পড়ুয়ারা, এগিয়ে সদর

প্রথম দশে এ বার ছয়

মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিক। ফের ভাল ফল পূর্ব বর্ধমানের। মেধা তালিকায় নাম তুললেন জেলার ছ’জন পড়ুয়া। মাধ্যমিকে সংখ্যাটা ছিল এক কম। তবে, খানিকটা নিষ্প্রভ থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিকে বাজি মেরেছে বর্ধমান শহর। প্রথম দশের মধ্যে শহরেরই চার জন।

ভিডিও কলে কথা বলছে দেবজ্যোতি।ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যয়

ভিডিও কলে কথা বলছে দেবজ্যোতি।ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যয়

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিক। ফের ভাল ফল পূর্ব বর্ধমানের। মেধা তালিকায় নাম তুললেন জেলার ছ’জন পড়ুয়া। মাধ্যমিকে সংখ্যাটা ছিল এক কম। তবে, খানিকটা নিষ্প্রভ থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিকে বাজি মেরেছে বর্ধমান শহর। প্রথম দশের মধ্যে শহরেরই চার জন।

বর্ধমান শহরের ইছালাবাদ সুকান্ত নগরের তিমিরবরণ দাস স্কুলে কখনও ফার্স্ট হননি। মাধ্যমিকেও মেধা তালিকায় নাম ছিল না। উচ্চ মাধ্যমিকে নাম থাকবে, এমন আশা করেনি তাঁর পরিবার। কিন্তু, সেই ছেলে এ বার জেলার শীর্ষে তো বটেই, ৪৯০ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছেন। ওই স্কুলেরই ছাত্র অর্কদীপ গুঁই ৪৮৭ নম্বর পেয়ে চতুর্থ। মেধা তালিকায় নাম উঠবে ভাবতে পারেননি অভীক ঘোষও। ৪৮২ নম্বর পেয়ে তিনি নবম হয়েছেন। এই তিন জনই বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ছাত্র। চরম অনটনের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে অভীকের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে নবম হয়ে জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন কালনা অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সুরজিৎ মাতব্বর।

মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্ব বর্ধমান টাউন স্কুলের। সেখান থেকে ৪৮৩ নম্বর পেয়ে অষ্টম হয়েছেন সায়ন্তন চক্রবর্তী। ৪৮৫ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেছেন কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের ছাত্র দেবজ্যোতি বন্দোপাধ্যায়।

বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল প্রতি বছরই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করে থাকে। তিমিরবরণ যে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করবেন, তা বোঝা গিয়েছিল সর্বভারতীয় স্তরে দু’টি তিনি পরীক্ষাতেই যোগ্যতামান অতিক্রম করায়। সংবাদমাধ্যমে তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই অবিরাম ফোন আসছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি, রায়নার বোখরা থেকেও তিমিরের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনেকই ছুটে এসেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা তিমিরবরণের কথায়, “ভাল ফল হবে ভেবেছিলাম। তা বলে তৃতীয় হব, ভাবিনি।’’ তিমিরবরণের বাবা, প্রদীপ দাস অঙ্কের শিক্ষক। মা তাপসীদেবী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। যুবরাজ সিংহের ভক্ত তিমিরবরণের গিটারের প্রতি আসক্তি রয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “বাঁধাধরা নিয়মে পড়ত না। মাঝরাতে উঠে ছাদে গিয়ে খেলেছে। গিটারও বাজিয়েছে।’’ চিকিৎসক হওয়ার পরে জেনেটিক্স নিয়ে গবেষণা করতে চান তিমিরবরণ।

মায়ের হাতে মিষ্টিমুখ তিমিরবরণের। ছবি: উদিত সিংহ

কাটোয়ার সুবোধস্মৃতি রোডের বাড়ি চতুর্থ অর্কদীপের। সেখানেই বাবা অমলকান্তি গুঁই ব্যবসা করেন। মা রুনু গুঁই পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা। ছেলেকে মামাবাড়ি, বর্ধমানের ভাতছালা কলোনিতে রেখে পড়িয়েছেন। এ দিন ফল প্রকাশের পরে রুনুদেবী সব কৃতিত্ব তাঁর মা-বাবাকে দিয়ে বলে ফেলেন, “আমাদের সিদ্ধান্তে যে ভুল ছিল না। সেটা আজ প্রমাণিত।“ ছোট থেকেই সাইকেলে করে নাতিকে স্কুলে যাতায়াত করেছেন দাদু অশোককুমার দাস। এ দিনও স্কুল থেকে মার্কশিট আনার সময়ে অর্কদীপের সঙ্গী ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “খেলা ছেড়ে শেষ একমাস পড়ায় খুব মন দিয়েছিল।’’ খেলা-পাগল অর্কদীপের আর এক সঙ্গী ছিল অরিজিৎ সিংহের গান।

দশম শ্রেণিতে যখন উঠলেন, সে বছরই কিডনিতে সংক্রমণ নিয়ে মারা যান দেবজ্যোতির বাবা অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায়। মাধ্যমিকের ফল আশানুরূপ না হওয়ায় ইলেভেনে ওঠার পর থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন দেবজ্যোতি। সেই চেষ্টারই ফসল ষষ্ঠ স্থান। জয়েন্টের প্রশিক্ষণের জন্য দিন দশেক আগে রাজস্থানের কোটায় গিয়েছেন তিনি। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী, মা সোমাদেবীর ফোনে এ দিন পান সুসংবাদ। সকালে কাটোয়ার নন্দলাল বসু রোডে, তাঁর বাড়িতে যান কাশীরাম দাস বিদ্যাতনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিন্টু কুমার সিংহ। বলছিলেন, ‘‘এক মনে দরজা বন্ধ করে পড়ত।’’ পিন্টুবাবু বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে ৬৬৬ পেয়েছিল ও। তখন থেকেই জেদ ছিল উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভাল ফল করার।’’ ফোনে দেবজ্যোতি জানান, অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জোবসের বক্তৃতা দেখে অনুপ্রাণিত হন। লক্ষ্য, আইআইটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স পড়া।

অষ্টম হওয়া মঙ্গলকোটের নিগণ গ্রামের ছেলে সায়ন্তনের বাবা দেবনাথ চক্রবর্তী বর্ধমানে পোস্ট অফিসে চাকরি করেন। তাঁরা এখন ২ নম্বর ইছলাবাদে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। দেবনাথবাবুর কথায়, “টেস্টের আগে দিনে ১০ ঘণ্টা করে পড়ত। টেস্টের পরে ১৫ ঘণ্টা। তখনই বুঝেছিলাম কিছু একটা হবে।’’ মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের অভীক ঘোষ সর্বভারতীয় পরীক্ষায় যোগ্যতামান পার করতে পারেননি। তাই উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে খুব একটা আশাও করেননি। ফল বেরনোর দিনেই সপরিবার মেমারির সাতগাছিয়ায় মামাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন অভীক ও তাঁর মা টুম্পাদেবী। বন্ধুর মায়েদের কাছ থেকে নবম হওয়ার খবর পেয়েই স্কুলে ছোটেন। টুম্পাদেবীর কথায়, “আমরা খুব ভেঙে পড়েছিলাম। এই ফল আমাদের মনে আশা জাগাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE