Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুঃস্থদের জন্য ‘কুপন’, খাবার শিক্ষক দম্পতির

করোনা-আবহে কেউ বিপাকে পড়া মানুষকে খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন। কেউ কিনে দিচ্ছেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালের এক শিক্ষক দম্পতি দু’ভাবেই সাহায্য করছেন বহু দুঃস্থ পড়ুয়া ও গরিব পরিবারকে। তা করতে কার্যত সারা মাসের বেতন ব্যয় করছেন শোভন সরকার ও প্রিয়াঙ্কা সরকার।

দম্পতির উদ্যোগে হোটেলে খাওয়ার ব্যবস্থা। নিজস্ব চিত্র

দম্পতির উদ্যোগে হোটেলে খাওয়ার ব্যবস্থা। নিজস্ব চিত্র

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

করোনা-আবহে কেউ বিপাকে পড়া মানুষকে খাবার দিয়ে সাহায্য করছেন। কেউ কিনে দিচ্ছেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস। পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালের এক শিক্ষক দম্পতি দু’ভাবেই সাহায্য করছেন বহু দুঃস্থ পড়ুয়া ও গরিব পরিবারকে। তা করতে কার্যত সারা মাসের বেতন ব্যয় করছেন শোভন সরকার ও প্রিয়াঙ্কা সরকার।

অণ্ডালের হাইস্কুলপাড়ায় থাকেন শোভনবাবু ও তাঁর স্ত্রী। শোভনবাবু বর্ধমানের জিয়ারা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। প্রিয়াঙ্কা অণ্ডালের দামোদর কলোনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। প্রিয়াঙ্কা জানান, ‘অনলাইন ক্লাস’ কেমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে রামপ্রসাদপুরের ৭/১ নম্বর কলোনি এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। দেখেন, ‘লকডাউন’-এর জেরে এলাকার অনেকেরই কাজকর্ম বন্ধ। অনেকের ঘরে খাবার নেই। তখনই ঠিক করেন, শুধু স্কুলের দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পরিবার নয়, এলাকার দুঃস্থ পরিবারগুলিরও পাশে দাঁড়াবেন। বাড়ি ফিরে ইচ্ছের কথা স্বামীকে জানান। স্ত্রীর কথায় রাজি হওয়াই নয়, নিজের বেতনও একই কাজে খরচ করবেন বলে ঠিক করেন শোভনবাবু। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘লকডাউনের জন্য এক রকম ঘরে বসেই বেতন মিলছে এখন। তা মানুষের কাজে লাগুক।’’ শোভনবাবু জানিয়েছেন, এপ্রিল ও মে মাসে দুঃস্থদের প্যাকেটে করে মুদির দোকানের জিনিস বিলি করেন। জুন মাসে যাঁর, যা প্রয়োজন, তা যাতে নিজেরাই কিনতে পারেন, সে জন্য পাঁচশো ও হাজার টাকা মূল্যের ‘কুপন’ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কুপন দেওয়ার আগে খোঁজ নিয়ে দেখা হয়, কার আর্থিক পরিস্থিতি কী। তার পরে স্থানীয় একটি মুদির দোকানের মালিককে নগদ টাকা দেওয়া হয়। তিনি পাঁচশো ও এক হাজার টাকা মূল্যের ‘কুপন’ দেন। তা বিলি করা হয় দুঃস্থদের। তাঁরা সেই ‘কুপন’ দোকানে দিয়ে প্রয়োজনমতো জিনিস কিনতে পারেন। তিনি বলেন, ‘‘নগদ টাকা দিলে বাজে খরচ হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। তাই ‘কুপন’-এর ব্যবস্থা। যাঁদের আর্থিক পরিস্থিতি খুব খারাপ, তাঁদেরই শুধু এক হাজার টাকার ‘কুপন’ দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের পাঁচশো টাকার।’’ বৃহস্পতিবার ৬৮টি পরিবারের মধ্যে ন’টি পরিবারকে এক হাজার এবং বাকিদের ৫০০ টাকার ‘কুপন’ দিয়েছেন ওই দম্পতি। শুক্রবার ৫৮টি পরিবারকে ‘কুপন’ দিয়েছেন তাঁরা। কুলডাঙা, রামপ্রসাদপুর, দাসপাড়া, স্কুলপাড়া, অরবিন্দনগর প্রভৃতি জায়গার দুঃস্থেরা ‘কুপ’ন পেয়েছেন। শোভনবাবু বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে মোট প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।’’ সাহায্য পাওয়া কুলডাঙার বাকু বাউরি, লাল্টু রুইদাসরা বলেন, ‘‘ওঁদের অনেক ধন্যবাদ। খুব বিপদে ছিলাম। ওঁরা কুপনের ব্যবস্থা করায় নিজেদের মতো করে জিনিস নিতে পারছি।’’ শোভনবাবুরা জানান, যাঁদের রান্না করার ব্যবস্থা নেই, তাঁদের একটি হোটেলে আগামী পাঁচ-ছ’দিন খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। ওই দম্পতি স্কুলে সীমাবদ্ধ না থেকে যে ভাবে কাজ করছেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’ একই কথা রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দিবাকর দত্তেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poor teacher food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE