Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
High Court

উনিশ বছরের লড়াই, নির্দেশ ‘স্থায়ী’ চাকরির

বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রায়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন, ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা এমন প্রত্যন্ত এলাকায় নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, যেখানকার শিশুরা অন্য অনেক শিশুর থেকে কম সুযোগ পায়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শমীক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০০:৩০
Share: Save:

দীর্ঘ উনিশ বছরের আইনি লড়াই শেষে চাকরিতে স্থায়ী হতে চলেছেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার হরিপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ছ’জন সংগঠক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রায়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, ২০০০ সালের ১ মে থেকে ওই সংগঠক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের চাকরি ‘স্থায়ী’ করতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, হরিপুর জুনিয়র হাইস্কুলকেও ওই তারিখ থেকে ‘স্থায়ী অনুমোদন’ দিতে হবে।

বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রায়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন, ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা এমন প্রত্যন্ত এলাকায় নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, যেখানকার শিশুরা অন্য অনেক শিশুর থেকে কম সুযোগ পায়। পঠনপাঠনের কাজে শিক্ষকেরা ত্রুটি রাখেননি। তাঁরা সমাজের একটি সম্মানীয় পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন।

প্রশান্তকুমার দাস-সহ ওই ছয় শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের আইনজীবী এক্রামুল বারি বৃহস্পতিবার জানান, ১৯৮১ সাল থেকে তাঁর মক্কেলরা ওই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত। সেই সময়ে স্কুলটি ‘সংগঠক স্কুল’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৯৯ সালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুলটিকে ‘নিউ সেট আপ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এক বছরের অস্থায়ী অনুমোদন দেয় এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ‘নিউ সেট আপ’-কে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা।

আইনজীবী এক্রামুল বারি জানান, ২০০৩ সালে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অমিতাভ লালা ‘নিউ সেট আপ’ খারিজ করে দেন এবং জেলা স্কুল পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) নির্দেশ দেন, স্কুলটি চলছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখতে। সেই সঙ্গে ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা কাজ চালিয়ে যেতে থাকলে তাঁদের স্বীকৃতি দিতে নির্দেশ দেন। রাজ্য সরকার বিচারপতি লালার নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করে। তা খারিজ হয়ে যায়।

তার পরেও ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা স্থায়ী চাকরি পাননি বলে অভিযোগ। হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন তাঁরা। তৎকালীন বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী বিচারপতি লালার নির্দেশ বহাল রাখেন এবং সেই সঙ্গে নির্দেশ দেন, বিচারপতি লালার নির্দেশ কার্যকর করা না হলে জেলা স্কুল পরিদর্শকের বেতন বন্ধ থাকবে। রাজ্য সরকার বিচারপতি দাস অধিকারীর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ফের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করে। ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি দাস অধিকারীর নির্দেশ বহাল রাখে। ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, এর পরে তাঁদের মাত্র এক বছরের বেতন দেওয়া হয়। রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ২০১৪ সালে স্কুলটিকে স্থায়ী অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ১৯৯৯ সাল থেকে সেই অনুমোদনের দাবি জানিয়ে ফের হাইকোর্টে মামলা হয়।

আইনজীবীদের সূত্রে জানা যায়, মামলার দশটি শুনানি হয়েছে। শেষ হয় জানুয়ারিতে। বিচারপতি বুধবার রায় দেন। পূর্ব বর্ধমানের স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দফতর সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ তাদের কাছে পৌঁছয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Court Law
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE