Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষোভ না তুললে কারখানা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি

রবিবার থেকে সরকারি মূল্যে মজুরি ও মাসে চারটে সবেতন ছুটির দাবিতে কারখানার গেটের সামনে আন্দোলন শিরু করছেন প্রায় তিনশো ঠিকা শ্রমিক। কারখানা কর্তৃপক্ষ ২০ টাকা বেতন বাড়াতে রাজি থাকলেও আন্দোলনকারীরা তা মানতে নারাজ।

নর্জার কাগজ কলের সামনে বিক্ষোভ ঠিকা শ্রমিকদের।  নিজস্ব চিত্র

নর্জার কাগজ কলের সামনে বিক্ষোভ ঠিকা শ্রমিকদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

কর্মবিরতি তুলে না নিলে ঠিকা শ্রমিকদের জন্যে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব বলে বিজ্ঞপ্তি ঝোলাল ভাতারের নর্জার একটি কাগজ কল কর্তৃপক্ষ। ‘কৃষ্ণা টিস্যু প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই কারখানার জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয়কুমার ভাদুড়ি সোমবার বলেন, “আমরা বাধ্য হয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়েছি। কারখানার ভিতর জরুরি পরিষেবা বন্ধের মুখে। আন্দোলনরত কর্মীরা কারখানার ভিতর কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। আমরা প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়ছি।’’

রবিবার থেকে সরকারি মূল্যে মজুরি ও মাসে চারটে সবেতন ছুটির দাবিতে কারখানার গেটের সামনে আন্দোলন শিরু করছেন প্রায় তিনশো ঠিকা শ্রমিক। কারখানা কর্তৃপক্ষ ২০ টাকা বেতন বাড়াতে রাজি থাকলেও আন্দোলনকারীরা তা মানতে নারাজ। কারখানার গেটে যাতে অশান্তির পরিবেশ তৈরি না হয়, সে জন্য ভাতার থানার পুলিশ টহল দিচ্ছে। শ্রম দফতর এ নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক ডাকতে চলেছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

গত ২৫ জানুয়ারি ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া স্থানীয় শ্রমিকেরা প্রথম কারখানার গেটের সামনে মজুরি ও ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। সে দিন এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা পূরণ হয়নি বলে রবিবার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই দিনই বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কর্তৃপক্ষ। ঠিক হয়, দৈনিক বেতন ২০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত মজুরি দিতে হবে। আন্দোলনকারীরা জানান, বর্তমানে ১৮০ টাকা দৈনিক বেতন দেওয়া হয়। তার মধ্যেও সব কেটেকুটে হাতে থাকছে মাত্র ১৬৫ টাকা। ফলে মাস গেলে এক এক জন শ্রমিক পাঁচ হাজার টাকাও পাচ্ছেন না। ওই টাকায় সংসার চলছে না বলেও তাঁদের দাবি। বিষয়টি নিয়ে ভাতারের বিডিও, সহকারী শ্রম কমিশনার (বর্ধমান উত্তর)-কেও চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম উৎপল মণ্ডল, পলাশ পাত্র, বিকাশ মণ্ডলদের দাবি, “২০১৪ সালে কারখানার ভিত তৈরির সময় থেকে আমরা কাজ করছি। তখনও যা বেতন ছিল, এখনও তাই। অথচ প্রতি বছরই বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। সংসার চালাতে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বলেই আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছি।’’ তাঁদের আরও দাবি, কারখানার ভিতর কর্মচারীদের অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। ন্যূনতম নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থাও নেই।

যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্দোলনকারীরা ঠিকাদার সংস্থার কর্মী। সরাসরি কারখানার শ্রমিক নন। তারপরেও তাঁরা শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছেন। এ বারেও বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রস্তাব না মানলে কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ৩০০ টন কাগজ উৎপাদন করা হয়। তার ৯৫ শতাংশ চিন-গ্রিসে রফতানি করা হয়। সেই উৎপাদন বন্ধ রেখে যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। তাঁদের দাবি, জাপান থেকে একটি সংস্থার কর্মীরা এসেছেন। বিক্ষোভের জেরে তাঁরা কারখানায় ঢুকতে পারেননি। ভোপাল থেকে আসা একটি সংস্থার লোকেরাও বিক্ষোভের জেরে কাজ না করেই ফিরে গিয়েছেন বলে জানান তাঁরা। ম্যানেজার বলেন, ‘‘আন্দোলনের জন্য কারখানার প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই কারখানার স্বার্থে কর্মবিরতি তুলে নিন শ্রমিকেরা। তা না হলে কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে।’’

ভাতারের বিডিও শুভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’ শ্রম কমিশনার (দুর্গাপুর) দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ ব্যাপারে দ্রুত বৈঠক ডেকে সমস্যা মেটানোর জন্য সহকারী শ্রম কমিশনার (বর্ধমান উত্তর)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Notice Paper Mill Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE