স্কুলে গৌতমবাবু। নিজস্ব চিত্র
মাসের শেষে বেতন ঢুকলেই টাকাটা তুলে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার কী বইপত্র লাগবে সে খোঁজ শুরু করেন তিনি। প্রতি বছরই দু’মাসের পুরো বেতন জমিয়ে দুঃস্থ পড়ুয়াদের বই কিনে দেন কাটোয়ার নওয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম দাস।
বছর দুয়েক আগে নওয়াপাড়ার ওই স্কুলে চাকরি পান বছর উনচল্লিশের গৌতমবাবু। তার আগে গৃহশিক্ষকতা করতেন তিনি। শুক্রবার ২৫ জন পঞ্চম শ্রেণির দুঃস্থ পড়ুয়ার হাতে ব্যকরণ, গণিত-সহ বেশ কিছু গল্পের বইও তুলে দেন তিনি। স্কুল সূত্রে জানা যায়, এই পড়ুয়াদের কারও বাড়ি দাঁইহাট, কারও আক্রা, তো কারও জগদানন্দপুরে। গৃহশিক্ষক রেখে পড়ার মতো বা পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার মতো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এদের কারও নেই। সেটা জেনেই গত বছর থেকেই লতিকা দাস, অনন্যা দাসদের জন্য টাকা জমাতে শুরু করেন গৌতমবাবু।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে কাটোয়ার আদর্শপল্লি, রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ, ডিডিসি গার্লসের জনা কুড়ি পড়ুায়ার হাতে একাধিক বিষয়ের বই তুলে দিয়েছেন ওই শিক্ষক। এমনকী, কলেজের দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। তবে নিজের স্কুলে এই উদ্যোগ এ বছরই প্রথম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় যার যখন বইয়ের প্রয়োজন একবার গৌতমবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তিনি নিজে গিয়ে পড়ুয়াকে সাহায্য করে আসেন। আর গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এক সময় বইয়ের অভাবে পড়তে পারিনি। চেয়েচিন্তে বই জোগাড় করে স্নাতক হয়েছি। বই না পেলে অনেক মেধা যে অচিরে নষ্ট হয়ে যায় তা জানি। তাই চাকরি পাওয়ার পরে শপথ নিই, যে পড়তে চায় তার হাতে সাধ্যমতো বই তুলে দেব।’’
ছেলের এমন সিদ্ধান্তে খুশি বৃদ্ধ বাবা নবকুমার দাসও। তাঁর কথায়, ‘‘মাছ ধরার সামান্য আয়ে তিন ছেলেকে ভাল ভাবে পড়াতে পারিনি। ওর আয়ে অন্যরা পড়ুক, এর চেয়ে খুশি আর কিসে।’’ গৌতমবাবুর কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মানসকুমার বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বই ছাড়া যে বইগুলো কিনতে হয় সেগুলো উনি কিনে দেন। শুধু বই দিয়ে নয়, কারও চিকিৎসা বা বিয়েতে অর্থসাহায্য লাগলেও উনি এগিয়ে যান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy