মঞ্চে: পুরস্কার নিচ্ছেন মহম্মদ কামারুজ্জামান। নিজস্ব চিত্র
দু’দিনের বেশি কোনও ছাত্র স্কুলে না এলেই তার বাড়িতে ছুটে যান প্রধান শিক্ষক। এলাকার শিশুদের পড়ায় উৎসাহী করতে খাতা, পেন, পেনসিল কিনে দেন। স্কুলছুটদের ফেরাতে, পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বদ্ধ ঘরে নয়, ছাদে, বাগানেও পড়ান। এমন প্রচেষ্টাতেই শিক্ষারত্ন পেলেন কেতুগ্রামের কাঁটারি পূর্বপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ কামারুজ্জামান।
দশ বছর ধরে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন রাজুরের বাসিন্দা বছর বাহান্নর এই শিক্ষক। বছর পনেরো আগে কাঠা পাঁচেক জায়গার উপর যখন স্কুলটি তৈরি হয় তখন চারটে ঘর ছিল। প্রধান শিক্ষকের চেষ্টা এবং সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থ সাহায্যে ২৬৮ ছাত্রের স্কুলে এখন আরও পাঁচটি ঘর হয়েছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। শিক্ষক সুবীর দত্ত, জামিলাতুন্নেসারা জানান, ছাত্রদের মধ্যে কে অসুস্থ, কেন স্কুলে আসে না এ সব খোঁজ নিতে প্রায়শই ছাত্রদের বাড়িতে পৌঁছে যান উনি। টাকার অভাবে পড়া বন্ধ হতে দেন না কারও। এ ছাড়াও শিশুদের চায়ের দোকানে বা হোটেলে নয়, বরং স্কুলে পাঠানোর কথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝান ওই শিক্ষক। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনা কুড়ি ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে ‘চাইল্ড ক্যাবিনেট’ তৈরি করেছেন তিনি। যাঁরা সমস্ত ছাত্র রোজ নখ কেটে, পরিষ্কার পোশাকে স্কুলে আসে কি না, মিড-ডে মিলের হাল কেমন তার তদারকি করে প্রতি শনিবার শিক্ষকদের জানায়। এ সব কাজের জন্যই বছর পাঁচেক আগে নির্মল বিদ্যালয় পুরষ্কার, বছর চারেক আগে শিশুমিত্র ও এ বছরে উৎকর্ষ অভিযানে জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছে কাঁটারির এই স্কুল।
এ ছাড়াও থানকুনিপাতা যে পেটের অসুখে কাজ দেয়, বাসক পাতার রস যে সর্দি-কাশিতে কার্যকারী এ সব বোঝাতে স্কুলের ছাদে কালমেঘ, তুলসি, পাথরকুচি, থানকুনির মতো ভেষজ গাছ লাগিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘‘এতে একদিকে পড়ুয়ারা যেমন গাছ চিনবে, তেমনই প্রতিটি গাছের উপকারিতাও মনে রাখতে শিখবে।’’ রকমারি ফুলগাছের সঙ্গে শীতকালে পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলের ছাদেই পালংশাক, মুলোরও চাষ করেন ওই শিক্ষক।
অভিভাবক পল্টু শেখ, আজমির শেখরা বলেন, ‘‘স্কুলকে ছবির মতো সুন্দর করে তুলেছেন উনি।’’ আর কামারুজ্জামান বলেন, ‘‘এলাকায় শিক্ষার হার বাড়ানোই লক্ষ্য। আমার স্বপ্ন প্রতি বাড়িরা শিশুরা যেন স্কুলে আসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy