Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে একা থাকা মহিলা খুন, বিক্ষোভ

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কালনা ও মেমারি থানার পুলিশ। পৌঁছন এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) শৌভনিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কালনার এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী।

বাড়িতে ভিড় জনতার। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে ভিড় জনতার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৪
Share: Save:

বাড়িতে একা থাকা মহিলা খুনের ঘটনা ঘটল আবার। এ বার মেমারিতে খুন হলেন এক প্রৌঢ়া। মঙ্গলবার বিকেলে বোহাড়ের বড়া গ্রামে এই ঘটনার পরে পুলিশ গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। বাড়িতে ঢুকে একের পর এক মহিলাকে খুন বা খুনের চেষ্টা করা হলেও কেন কিনারা হচ্ছে না, প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। দ্রুত ঘটনার কিনারার আশ্বাস দেয় পুলিশ। তবে এক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে কোনও চেন মেলেনি। কী ভাবে খুন, তা ময়না-তদন্ত রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানায় পুলিশ।

বিটরা-মেমারি রাস্তার পাশে ছোট একটি বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন রীতা রায় (৫২)। তাঁদের দুই ছেলে কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। এক মেয়ে বিবাহিত। কাছাকাছিই থাকেন রীতাদেবীর মা শোভারানি বিশ্বাস। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন রীতাদেবীর স্বামী বলাই রায় কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ শোভারানিদেবী মেয়ের বাড়িতে আসেন। তিনি জানান, দরজা খোলা ছিল। ভিতরে ঢুকে দেখেন, বিছানায় মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে। ঘরে টিভি চলছে। জিনিসপত্র ছড়ানো।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কালনা ও মেমারি থানার পুলিশ। পৌঁছন এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) শৌভনিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কালনার এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী। পুলিশ জানায়, মহিলার মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গলায় কাপড় জড়ানো। তবে ঘর থেকে বিশেষ কিছু খোয়া যায়নি বলে জেনেছে পুলিশ। শোভারানিদেবীর বক্তব্য, ‘‘দুপুর ২টো নাগাদ মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বিকেলে যখন মাঠ থেকে গরু আনতে যাচ্ছি, মেয়ের বাড়ির দরজা খোলা দেখে সন্দেহ হয়। ঢুকে দেখি এই কাণ্ড!’’ মৃতার ভাই অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেউ কেন দিদিকে খুন করবে, বুঝতে পারছি না।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অনেকের দাবি, রীতাদেবী এলাকায় নির্বিবাদী মানুষ বলেই পরিচিত ছিলেন। তাই খুনের কারণ নিয়ে তাঁরা ধন্দে। এ দিন পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পুলিশ জানায়, তদন্তের জন্য নদিয়া থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ আনা হচ্ছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দুপুরে বাড়িতে একা থাকা মহিলাদের উপরে বারবার হামলার ঘটনা ঘটছে কালনা-মেমারি এলাকায়। এর আগে অধিকাংশ ঘটনায় বিদ্যুতের মিটার দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকে গলায় চেন পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টা করেছে আততায়ী। কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। কোনওমতে রক্ষা পেয়েছেন জনা কয়েক। এ দিনের ঘটনায় চেন না মিললেও পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, খুনের পিছনে রয়েছে সেই আততায়ীই। গোটা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এলাকায়। কালনার বাসিন্দা সোমনাথ সাহা বলেন, ‘‘কেন বারবার মহিলারা আক্রান্ত হচ্ছেন, বুঝতে পারছি না! পুলিশ কেন আততায়ীকে ধরতে পারছে না, সেটাও অবাক করছে আমাদের!’’ চা বিক্রেতা গোপাল কর্মকারের কথায়, ‘‘পুলিশকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে দুষ্কৃতী। তাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।’’

পুলিশ জানায়, আততায়ীর সম্বন্ধে কিছু তথ্য মিলেছে। মোটরবাইকে এসে মূলত রাস্তার পাশে কোনও বাড়িতে দুষ্কর্ম করে পালিয়ে যাচ্ছে সে। আহতদের কাছে বিবরণ শুনে দুষ্কৃতীর ছবি আঁকানো হয়েছে। নানা জনবহুল এলাকায় দেখানো হচ্ছে সেই ছবি। গ্রামগঞ্জে সিভিক ভলান্টিয়ার বাড়ানো হয়েছে। নানা জায়গায় নাকাবন্দি করা হচ্ছে। কালনার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দু’বার খুব কাছাকাছি পৌঁছেও আমরা আততায়ীকে ধরতে পারিনি। আশা করছি শীঘ্রই গ্রেফতার করা যাবে।’’ এ দিন মেমারির ঘটনার পিছনে একই আততায়ী রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগের ঘটনাগুলির সঙ্গে এটির কিছু মৌলিক পার্থক্য নজরে এসেছে। আশা করছি তাড়াতাড়িই কিনারা করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime West Bengal Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE