Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কমিটি হয়নি, উদ্ধার শিশুরা ‘বন্দি’ই

শেষে বীরভূমের শিশুকল্যাণ কমিটি  শনিবার বর্ধমানে এসে ওই বালককে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

বর্ধমান স্টেশনে বাবা-মায়ের সঙ্গে ট্রেনে উঠতে পারেনি এক বালক। রেল পুলিশের তাকে চাইল্ড লাইনের হেফাজতে পাঠায়। বর্ধমান শহরে বাড়ি হলেও জেলায় কোনও শিশুকল্যাণ কমিটি (সিডব্লুসি) না থাকায় ওই বালককে দশ দিন একটা ঘরে কাটাতে হয়। বাবা-মা প্রতিদিন দেখতে এলেও বাড়ি নিয়ে যেতে পারেননি ছেলেকে। শেষে বীরভূমের শিশুকল্যাণ কমিটি শনিবার বর্ধমানে এসে ওই বালককে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

প্রতিদিনই জেলা জুড়ে ৪-৫ জন নাবালককে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। মহিলাদের জন্যে সরকারি হোম থাকলেও নাবালকদের রাখার কোনও জায়গা না থাকায় ছোট একটি ঘরে তাদের রাখা হয়। চাইল্ড লাইনের বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবের দাবি, ‘‘উদ্ধার হওয়া নাবালকদের বেশির ভাগই আশপাশের বাসিন্দা। জেলায় শিশুকল্যাণ কমিটি থাকলে দু’এক দিনের মধ্যেই তারা বাড়ি যেতে পারত। কিন্তু পরিকাঠামো না থাকায় অসুবিধে হয়।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ১৫ জানুয়ারি শিশুকল্যাণ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। গত বছর পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৫ জনের শিশুকল্যাণ কমিটি গঠন করে দিত। কিন্তু জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের নির্দেশে প্রতি জেলায় শিশুকল্যাণ কমিটি গঠনের ভার নিয়েছে নবান্ন। কমিটি ভাঙার দশ মাস পরেও নবান্ন থেকে কোনও নির্দেশিকা জেলা প্রশাসনের কাছে আসেনি। কাজ চালাতে প্রথমে মালদহ জেলার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানকে সংযুক্ত করা হয়। সেটি ভেঙে যাওয়ার পরে বীরভূম জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানকে জোড়া হয়। বিগত শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ বলেন, “আশা করছি খুব দ্রুত আমাদের জেলায় কমিটি গঠন করে পাঠাবে নবান্ন।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি এক বিচারক চিঠি দিয়ে শিশুকল্যাণ কমিটি না থাকায় ‘প্রশাসনিক সঙ্কট’ দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, শিশুদের সুরক্ষার জন্যই ওই কমিটি। কমিটির ভবনের কাছে শিশুদের হোম হওয়ার কথা। সেই মত বর্ধমান শহরের উপকন্ঠে বাম গ্রামে সরকারি হোমের ভিতরেই সিডব্লুসির পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও শিশুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে তাকে সিডব্লুসির কাছে পেশ করতে হয়। পকসো আইনে কোনও মামলা হলে পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিডব্লুসিকে জানাতে বাধ্য থাকে। কিন্তু ওই কমিটি না থাকায় নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

চাইল্ড লাইনের কর্তারা জানান, শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ম। কিন্তু কমিটি না থাকায় শিশু দিবসেও উদ্ধার হওয়া শিশুদের ‘কল্যাণ’ করা যাচ্ছে না। বদ্ধ ঘরের আটকে জানলার দিকে চেয়ে বসে রয়েছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE