Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Durgapur Steel Plant

পরপর দুর্ঘটনা কি নিরাপত্তার ‘অভাবে’

রবিবার ওই ঘটনার পরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, নিরাপত্তার বিষয়ে উপযুক্ত নজরদারির অভাবেই বারবার ঘটছে এমন ঘটনা।

রবিবারের দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন এই কর্মী, আধিকারিকেরাই। নিজস্ব চিত্র

রবিবারের দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন এই কর্মী, আধিকারিকেরাই। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৮
Share: Save:

কারখানার ব্লাস্ট ফার্নেসে দুর্ঘটনা ঘটে কর্মীদের জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। রবিবার ওই ঘটনার পরে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, প্ল্যান্টে অতীতেও নানা দুর্ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, নিরাপত্তার বিষয়ে উপযুক্ত নজরদারির অভাবেই বারবার ঘটছে এমন ঘটনা। যদিও ডিএসপি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ডিএসপি-র বিভিন্ন বিভাগে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে জখম হওয়ার পাশাপাশি, শ্রমিকের মৃত্যুও ঘটেছে। যেমন, ২০১৬-র মার্চ ও ২০১৮-র জুলাইয়ে এসএমএস (‘স্টিল মেল্টিং শপ’) বিভাগে দুর্ঘটনায় যথাক্রমে এক স্থায়ী শ্রমিক ও আধিকারিকের মৃত্যু হয়। ২০১৭-র অক্টোবরে কোকআভেন প্ল্যান্টে কাজ করার সময়ে ক্রেন ছিড়ে ধাতব সামগ্রী পড়ে গিয়েছিল। তাতে গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যু হয় এক ঠিকাকর্মীর। ওই বছরই নভেম্বরে কোকআভেন প্ল্যান্টে ‘গ্যাস লিক’ হয়ে দু’জন ঠিকাকর্মীর মৃত্যু হয়। অসুস্থ হন আরও পাঁচ জন।

তা ছাড়া, এ দিন যে ব্লাস্ট ফার্নেস বিভাগে বিপত্তি ঘটেছে, সেখানেও বিপত্তির ঘটনা নেহাত কম নয়। ২০১০-র জুলাই ও ২০১৮-র জানুয়ারিতে ২ নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেসে বিষাক্ত গ্যাস (নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সিজেনের মিশ্রণ) ‘লিক’ করে যথাক্রমে ২৫ জন কর্মী এবং ছ’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৪-র ডিসেম্বরে ব্লাস্ট ফার্নেস পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয় দুই কর্মীর। ব্লাস্ট ফার্নেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজিএম-কে সেই ঘটনায় সাসপেন্ড করেন কর্তৃপক্ষ। ২০১৯-র ফেব্রুয়ারিতে ফের ব্লাস্ট ফার্নেসে গ্যাস থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন জন। ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষাক্ত ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাসের কোনও গন্ধ না থাকায় আগাম আঁচ করা যায় না। ওই গ্যাসে থাকা কার্বন মনোক্সাইড শরীর অসুস্থ করে। এলিয়ে পড়া শরীর আর তোলার ক্ষমতা থাকে না।

কিন্তু কেন বারবার এই দুর্ঘটনা? সিটু নেতা সৌরভ দত্তের কথায়, ‘‘শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত কারখানা কর্তৃপক্ষের। তা ছাড়া বেশির ভাগ কাজে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ঠিকা সংস্থাকে দেওয়ার কারণেও বিপদ বাড়াচ্ছে।’’ রবিবার যেখানে দুর্ঘটনা হয়, সেখানে গত দু’-তিন ধরে মেরামতি নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল বলে দাবি করেন ডিএসপি-র আইএনটিটিইউসি নেতা স্নেহাশিস ঘোষ। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘গত মাসেও সেফ্‌টি কমিটির বৈঠক হয়েছে। কিন্তু শুধু উৎপাদন হবে, কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হবে না, এটা চলবে না।’’ ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের আইএনটিটিইউসি নেতা হিমাংশু আশ ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষের কাছে। যদিও বিএমএস নেতা অরূপ রায় মনে করেন, ‘‘ডিএসপি কর্তৃপক্ষ আগের থেকে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক হয়েছেন। নিরাপত্তা বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতা কর্মসূচি হয়। তা সত্ত্বেও বারবার দুর্ঘটনা শ্রমিক-কর্মীদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

তবে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিয়ে কোনও গাফিলতির কথা স্বীকার করেননি। তাঁদের দাবি, নিরাপত্তাকেই ‘সর্বোচ্চ’ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায়ের বক্তব্য, ‘‘দুর্ঘটনার হার শূন্যে নামানো আমাদের লক্ষ্য। সে জন্য নিয়মিত সেফ্‌টি কমিটির আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের সচেতন করতে নিরাপত্তা বিধি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা, ওয়ার্কশপেরও আয়োজন করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Steel Plant Accident Security System
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE