Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিচার নেই সতেরো বছর পরেও

সন্ধেবেলা চায়ের দোকানের সামনে চেয়ারে বসেছিলেন যুবক। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি। ভিতরে বসেছিলেন দু’জন আরোহী। গাড়ির জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসে পিস্তল ধরা একটি হাত। যুবকের বুক ফুঁড়ে দেয় পরপর দু’টি গুলি। তার পরেই দ্রুত বেগে চম্পট দেয় গাড়ি।

এখানেই খুন হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র

এখানেই খুন হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

সন্ধেবেলা চায়ের দোকানের সামনে চেয়ারে বসেছিলেন যুবক। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি। ভিতরে বসেছিলেন দু’জন আরোহী। গাড়ির জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসে পিস্তল ধরা একটি হাত। যুবকের বুক ফুঁড়ে দেয় পরপর দু’টি গুলি। তার পরেই দ্রুত বেগে চম্পট দেয় গাড়ি।

২০০০ সালের ২৩ অক্টোবর সন্ধে সওয়া ৭টা নাগাদ জামুড়িয়ার শিবডাঙায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় গুলিবিদ্ধ যুবক মহম্মদ সামশেরের (২৬)। যে দোকানের সামনে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটির মালিক মন্দ্রিকা সিংহ পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু তার পরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এখনও। জামিনে ছাড়া পেয়ে অভিযুক্তেরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে, দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

শিবডাঙায় একটি চা-চপের দোকান রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত খনিকর্মী মন্দ্রিকাবাবুর। সেই খুনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সে দিন আমি দোকানের ভিতরে ব্যস্ত ছিলাম। প্রতিদিনের মতোই সামশের এসে বাইরে চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। তার পরেই গুলির আওয়াজ শুনে বাইরে তাকিয়ে দেখি, গাড়িতে বসে থাকা এক জনের হাতে পিস্তল। মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সামশের।’’ তিনি জানান, আততায়ীরা সোজা রাস্তা ধরে চম্পট দেয়। এলাকার মানুষজন সামশেরকে আসনসোল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মন্দ্রিকাবাবু আরও বলেন, ‘‘আমি খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। দু’বছর আগে পুলিশ আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তার পরেও বিচার প্রক্রিয়া না গড়ানোয় হতাশা বাড়ছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার পরে খনি থেকে অবসর নিয়ে সামশেরের বাবা সপরিবারে বিহারের জামুইয়ে চলে যান। বাসিন্দারা জানান, সামশের ১৯৯৫ সালে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে গৃহশিক্ষকতা করতেন। ভাল শিক্ষক হিসেবে নামও হয়। এলাকায় তিনি কোনও বিবাদে জড়িত ছিলেন না বলেও এলাকাবাসীর অনেকের দাবি।

পুলিশ এই ঘটনায় প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দা নারায়ণ সাউকে গ্রেফতার করে। কিন্তু ২০০২ সালে আদালতে পেশ করা চার্জশিটে তাঁকে অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়। নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি এলাকায় ছিলাম না। পরে সামশেরের পরিবারের পাশে থেকেছি। বিনা কারণে আমাকে জেল খাটতে হয়। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীরা এখনও সাজা পেল না!’’ পুলিশ পরে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। তিন মাস জেল-হাজতে থাকার পরে সবাই জামিন পেয়ে যায়। চার্জশিটে পুলিশ দাবি করেছে, সামশেরকে খুন করেছে অবৈধ কয়লার কারবার-সহ নানা অপরাধে যুক্ত দুষ্কৃতীরা। নারীঘটিত কারণেই এই ঘটনা বলে অভিযুক্তেরা জেরায় জানিয়েছে, দাবি পুলিশের।

সামশেরের ভাই মহম্মদ গুড্ডু ফোনে বলেন, ‘‘১৭ বছরেও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল না। জানি না কবে দুষ্কৃতীরা সাজা পাবে!’’ আসানসোলের সরকার পক্ষের আইনজীবী বিনয়েন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের নিয়মিত আদালতে হাজির না হওয়া-সহ কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ মামলা দীর্ঘায়িত হয়। এক্ষেত্রেও তেমন কোনও কারণেই বিচার শেষ হয়নি বলে তাঁর মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jamuria murder murder mystery unsolved case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE