Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ফিরবে জমি, ৪৮ বছর পরে রায় কোর্টের

শুক্রবার কালনা আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ দেবকুমার ঘোষ রায় দেন, পূর্বস্থলীর ভান্ডারটিকুরি স্টেশনের কাছে ২৯ শতকের ওই জমিটি নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে মামলাকারীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মুন্সেফ কোর্ট এই কাজ করবে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০৭
Share: Save:

জমির দখল চেয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বাদী-বিবাদি দু’পক্ষের লোকের। পেরিয়েছে ৪৮ বছর। অবশেষে ওই জমি নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে মামলাকারীর হাতে তুলে দেওয়ার রায় দিল আদালত।

শুক্রবার কালনা আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ দেবকুমার ঘোষ রায় দেন, পূর্বস্থলীর ভান্ডারটিকুরি স্টেশনের কাছে ২৯ শতকের ওই জমিটি নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে মামলাকারীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। মুন্সেফ কোর্ট এই কাজ করবে।

তবে এই মামলার রায় হলেও জেলা জুড়ে দেওয়ানি, ফৌজদারি মিলিয়ে পঁচিশ বছরের বেশি চলছে এমন প্রায় চার হাজার মামলা ঝুলছে। কালনা মুন্সেফ কোর্টেই প্রায় ১৩০০ মামলা ঝুলছে। আইনজীবীদের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় অনেক শরিক হলে তাঁদের সমন পাঠানো-সহ নানা প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় চলে যায়। এই কারণেও দেরি হয়।

আইনজীবীরা জানান, ভান্ডারটিকুরির ওই জমিটি সারথীমোহন সেনাপতি নামে এক জনের কাছ থেকে কেনেন এলাকার কপিলমুনির আশ্রমের সন্ন্যাসী অজিতানন্দ ব্রহ্মচারী। তাঁর পরিবারের দাবি, এলাকায় বন্যা হওয়ায় এক সময়ে ওই জমিতে কালীপদ ভদ্র-সহ তিনটি পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁরাই ওই জমি জবরদখল করেন বলে অভিযোগ। ১৯৬৯ সালে বিষয়টি নিয়ে কালনা আদালতে মামলা করেন সন্ন্যাসী। ১৯৯০-এর ১২ এপ্রিল দেওয়ানি আদালতের রায় তাঁর পক্ষে যায়। বাকি দু’জন উঠে গেলেও থেকে যান কালীপদবাবু। কালীপদবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর বড় ছেলে কার্তিক ভদ্র ১৪ শতক জমিতে বাড়ি ও সাইকেল গ্যারাজ তৈরি করেন। ইতিমধ্যে ৯০-এর দশকে রাজ্য সরকার জমিটি ‘খাস’ বলে জেলা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করে। ওই মামলার রায়ও সন্ন্যাসীর পক্ষে যায়। তার পরেও জমির দখল ফিরে না পাওয়ায় ফের আদালতে মামলা করেন সন্ন্যাসী।

ওই মামলা চলাকালীন ২০১৩-র ২৯ নভেম্বর সন্ন্যাসী মারা যান। তাঁর পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে ওই সম্পত্তি বোন মেনকা জানাকে দিয়ে যান তিনি। ওই মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে দেওয়ানি আদালত জায়গার দখল মেনকাদেবীকে দেওয়ার নির্দেশ দেয় বলে দাবি তাঁর ছেলে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার অচিন্ত্যনগরের বাসিন্দা সুবীরবাবুর। তাঁদের দাবি, ২১ ফেব্রুয়ারি জমির ‘দখল’ বৃদ্ধা মেনকাদেবীকে দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বিগড়োনোর আশঙ্কায় ফিরেও আসে পুলিশ। ফের আদালতের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা। এ দিন সুবীরবাবুর দাবি, ‘‘ইতিমধ্যেই নানা প্রশাসনিক কাজ, মামলা লড়ার খরচ জোগাতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এ বার রায় আমাদের পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু জমি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারছি না।’’

মেনকাদেবীর আইনজীবী আসগর আলি মণ্ডল বলেন, ‘‘এক দিকে আদালতে মামলার পাহাড়, অন্য দিকে বিপক্ষ বারবার নানা মামলা দায়ের করায় এমন দীর্ঘসূত্রিতা। তবে আশা করি এ বার জমি পেতে দেরি হবে না।’’ কার্তিকবাবুর আইনজীবী আহম্মেদ শেখের বক্তব্য, ‘‘আদালতের রায় মেনে নেব।’’

কালনা বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে পার্থসারথী কর জানান, এমন মামলা বহু রয়েছে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির সীমা নেই। আরও একটা মুন্সেফ আদালতের দাবিতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার ও জেলা জজকে বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চিঠি পাঠিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna Kalna Court Land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE