অতিরিক্ত পড়ুয়া নিয়ে দৌড়য় অনেক পুলকার, অভিযোগ শহরবাসীর। ছবি: বিকাশ মশান
ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই। যতক্ষণ না তারা বাড়ি ফিরছে, উদ্বেগ থাকেই— পুলকারে যাতায়াত করা পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা এমন অভিযোগ করেন প্রায়শই। কখনও পথচারীকে পুলকারের ধাক্কা, আবার কখনও গাড়ি উল্টে পড়ুয়াদের জখম হওয়ার ঘটনা ঘটছে দুর্গাপুরে। শহরবাসীর অনেকের দাবি, পুলকারগুলি নিয়মনীতি মেনে চলছে কি না, তা দেখতে অভিযানে নামুক প্রশাসন। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলের আশ্বাস, পুলকার চালকদের বৈঠকে ডেকে সতর্ক করা হবে। তার পরেও বিধি না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার সকালে ডিএসপি টাউনশিপের বি-জোনে একটি পুলকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। জখম হয় এক বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিকের ১২ জন পড়ুয়া। ডিএসপি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয় তাদের। দুর্ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পড়ুয়ারা। তাদের দাবি, চালক পাশের আসনে বসা এক মহিলাকে গাড়ি চালাতে দিয়েছিল। তার পরেই দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও পুলকার চালক এবং ওই মহিলা সে কথা মানতে চাননি। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া বাজারে এক মোটরবাইক আরোহী পুলকারের ধাক্কায় মারা যান। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বেশ কিছু পুলকার চালক বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালান। সে জন্যই বারবার দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়িগুলি পড়ুয়া আনা-নেওয়ার জন্য উপযুক্ত, সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাঁদের।
দুর্গাপুরে বহু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের নিজস্ব বাস বা গাড়ি নেই। কিছু স্কুলে সে সব থাকলেও, তার সংখ্যা যথেষ্ট নয়। বাধ্য হয়ে বহু পড়ুয়াকে পুলকারে যাতায়াত করতে হয়। পরিবহণ দফতর থেকে পুলকারে বিশেষ রং ও প্রতীক ব্যবহার, বিশেষ লাইসেন্স নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি এখনও। সেই সুযোগে বহু ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি পুলকার হিসাবে চলছে বলে অভিযোগ।
অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, আগে পুলকারের তালিকায় মিনিবাস থেকে অটো, ট্রেকার, রিকশা কিছুই বাদ ছিল না। বহন ক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি পড়ুয়া তুলে ছুটত সেগুলি। প্রশাসনের তরফে বারবার অভিযানের পরে, বেহাল অনেক গাড়ি, বাস পুলকার হিসাবে চালানো বন্ধ হয়েছে। আগে ছাদ খোলা গাড়ির মাথায় মোটা ত্রিপলের ছাউনি দিয়েও পুলকার হিসাবে চলত। এখন তেমন গাড়ি বিশেষ দেখা যায় না বলে দাবি অভিভাবকদের। প্রশাসন গাড়ির ‘ফিটনেস’ শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক করেছে। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে আসন সংখ্যার তুলনায় দেড় গুণের বেশি পড়ুয়া বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলকার চালকদের নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাধারণ ভাবে অধিকাংশ পুলকার এই নিয়ম মেনে চলে বলে জানান অভিভাবকেরা। তবে কিছু চালক অনিয়মের চেষ্টা করেন বলে তাঁদের অভিযোগ।
পুলকার মালিকদের আবার দাবি, অভিভাবকেরা ভাড়া বাড়াতে চান না। আর্থিক কারণে অনেকে নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে পারেন না। মানবিক কারণে কম ভাড়ায় পড়ুয়া নিয়ে যেতে হয়। শহরের পুলকার মালিক সংগঠনের দাবি, এ সব কারণেই সমস্ত নিয়ম মেনে ব্যবসা করা সম্ভব হয় না তাঁদের পক্ষে। চালকদেরও বেশি বেতন দেওয়া যায় না। বাড়তি রোজগারের আশায় এক পুলকারে একাধিক স্কুলের পড়ুয়া নিয়ে যান চালকদের একাংশ। বেনাচিতি এলাকার এক পুলকার চালকের কথায়, ‘‘ডিএসপি টাউনশিপের একটি স্কুলে পড়ুয়া নামিয়ে বিধাননগরের একটি স্কুলে পড়ুয়া পৌঁছতে যাই। ফেরার সময়েও তা করতে হয়। সাবধানে গাড়ি চালাই। কিন্তু এক-আধ দিন কোনও কারণে দেরি হয়ে গেলে গতি বাড়াতে বাধ্য হই।’’
সোমবার দুর্ঘটনার পরে পুলকার নিয়ে ফের নড়ে বসেছে প্রশাসন। মহকুমাশাসক জানান, পড়ুয়াদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলকারকে চলতে হবে নিয়ম মেনেই। তিনি বলেন, ‘‘ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া গাড়িও পড়ুয়া আনা-নেওয়া করছে বলে খবর পেয়েছি। পুলকার মালিকদের ডেকে সতর্ক করা হবে। এর পরে অনিয়ম ধরা পড়লে গাড়ির চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আদৌ পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না তা নিয়ে অভিভাবকদের অনেকে অবশ্য সন্দিহান। তাঁদের কথায়, ‘‘অতীতে দেখেছি, দুর্ঘটনা ঘটলেই প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ে। দিনকয়েক যেতে না যেতেই আগের পরিস্থিতি ফিরে আসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy