কুমারমঙ্গলম পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
যত কাণ্ড কুমারমঙ্গলম পার্ককে কেন্দ্র করে। গত কয়েক বছরে বারবার দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের কেন্দ্রে থাকা এই পার্কটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আটের দশকের মাঝামাঝি ডিএসপি ৮০ একর জায়গায় বিশাল একটি জলাশয়কে কেন্দ্র করে তৈরি করে পার্কটি। দেশের প্রথম ইস্পাতমন্ত্রী মোহন কুমারমঙ্গলমের নামে পার্কের নামকরণ করা হয়। বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘মিউজ়িক্যাল ফাউন্টেন’। দুর্গাপুর ছাড়া আশপাশের জেলা থেকেও অনেকে এখানে আসতেন। অর্থসঙ্কটের কারণে ১৯৯৪-এ পার্কটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০০৬-এ পার্কটি চালুর বিষয়ে উদ্যোগী হয় ডিএসপি। পার্কের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি বেসরকারি সংস্থাকে।
এর পরেই শুরু হয় নানা বিতর্ক—
বিতর্ক এক: বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষের পরেও তারা পার্ক ছেড়ে যায়নি বলে অভিযোগ। বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ডিএসপি জলের লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় মিউজ়িক্যাল ফাউন্টেন। তার পরে থেকে জল কিনে, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা করে পার্ক চলছে বলে দাবি বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার দেবাশিস রায়ের।
বিতর্ক দুই: এ দিকে, পার্কের কর্মীরা প্রায়ই নিয়মিত বেতন না পাওয়া, পিএফ-এ টাকা জমা না পড়া, বোনাস এবং ছুটির টাকা না মেলার অভিযোগ করেছেন। হয়েছে কর্মী বিক্ষোভও।
বিতর্ক তিন: ছটপুজোর সময়ে জলাশয়টি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে অশান্তি প্রায় প্রতি বছরের ঘটনা। ছটপুজো কমিটি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে প্রতি বছর পার্কের জলাশায়টি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশও করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। গত ছটপুজোর ঠিক আগে জলাশয়ের জল প্রথম বারের মতো শুকিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে পার্ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পরিকল্পনা করে জলাশয় শুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও পার্ক কর্তৃপক্ষ সেই অভিযোগ মানেননি।
বিতর্কের সাম্প্রতিকতম সংযোজন: বেসরকারি সংস্থার কর্তাকে মারধর, গুলি চালানো, রেস্তরাঁয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজীব ঘোষ নামে ওই তৃণমূল কাউন্সিলর। কিন্তু কেন এই ‘হামলা’, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে দুর্গাপুরের বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। এর নেপথ্যে ‘দখলের রাজনীতি’ রয়েছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা ছড়িয়েছে। এই জল্পনার কারণ হিসেবে শহরবাসীর একাংশের পর্যবেক্ষণ: দেবাশিসবাবু বিজেপি কর্মী হওয়ায় পার্কে ওই দলের নানা কর্মসূচি আয়োজিত হতে দেখা গিয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব, সাংসদদেরও ওই পার্কে নিয়মিত আসতে দেখা যায় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে রবিবার একটি সংগঠনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সেখানে তৃণমূল নেতাদের আসার কথাও প্রচারিত হয়। যদিও আয়োজক সংগঠনটি নিজেদের সম্পূর্ণ রূপে ‘অরাজনৈতিক’ বলে দাবি করেছিল। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি স্পষ্টই বলেন, ‘‘এই পার্কটি দুর্গাপুরের গর্ব। তা কখনও কোনও রাজনৈতিক দলের আখড়া হতে পারে না।’’ আর দেবাশিসবাবুর দাবি, ব্যবসার ক্ষেত্রে তিনি রাজনীতির রং দেখেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy