Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
দু’দিন অশান্তির পরে মঙ্গলকোটে অবরুদ্ধ মন্ত্রীর পথ

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নাকাল হয়ে বিক্ষোভ

কাশেমনগর ফুটবল মাঠে বৈরাগ্যচাঁদের মেলায় বুধবার রাতে পঞ্চরসের আসর বসেছিল। অভিযোগ, সেখানে ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামী লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের চাকদা গ্রামের এক জনকে মারধর করা হয়।

আটঘড়া মোড়ে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর গাড়ির সামনে বিক্ষোভ মহিলাদের। নিজস্ব চিত্র

আটঘড়া মোড়ে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর গাড়ির সামনে বিক্ষোভ মহিলাদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৩
Share: Save:

তাল ঠোকাঠুকি বাধে মাঝে-মধ্যেই। এলাকার পুরনো মেলায় ফের গোলমালে জড়িয়ে পড়েছিল দু’গোষ্ঠীর কয়েকজন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ও বিধায়কের অনুগামীদের সেই দ্বন্দ্বে তেতে উঠল মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা ও লাখুরিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম। দু’দিন ধরে বোমাবাজি, ভাঙচুর চলার পরে রবিবার সকালে এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। ঝাঁটা-লাঠি হাতে মহিলারা ঘণ্টাখানেক আটকে রাখলেন তাঁর গাড়ি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাশেমনগর ফুটবল মাঠে বৈরাগ্যচাঁদের মেলায় বুধবার রাতে পঞ্চরসের আসর বসেছিল। অভিযোগ, সেখানে ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামী লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের চাকদা গ্রামের এক জনকে মারধর করা হয়। পাল্টা বৃহস্পতিবার বিধায়ক অনুগামী গোতিষ্ঠার এক জনকে মেলায় ঢুকে মারধর ও তাঁর দোকান ভাঙচুর করা হয়। এর পরেই শুক্রবার সকাল থেকে তাণ্ডব শুরু হয় লাখুরিয়ার চাকদা, গোতিষ্ঠা বাসস্ট্যান্ড-সহ নানা এলাকায়। পুলিশ গিয়ে সাত জনকে গ্রেফতার করে।

শনিবার সকাল থেকে ফের লাখুরিয়ার চাকদা ও আমডোব এলাকায় বোমাবাজি শুরু হয়। অভিযোগ, দু’টি দোকানে ভাঙচুর ও একটি বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান অনেকে। পুলিশ গেলে তাদের গাড়ি লক্ষ করেও বোমা ছোড়া হয়। পরে পুলিশের বড় বাহিনী ও র‌্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ধার হয় বেশ কিছু বোমাও। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, জনা পঞ্চাশের যে দুষ্কৃতী দল দৌরাত্ম্য এলাকায় দাপিয়েছে তারা নিজেদের বিধায়ক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছে।

এ দিন বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা কাশেমনগরে আসছেন খবর পেয়ে সকাল ৯টা থেকে কয়েক হাজার মানুষ আটঘড়া মোড়ে গুসকরা-নতুনহাট রাস্তায় জড়ো হন। বিক্ষোভ দেখাতে আসা ববি বিবি, কড়ি বিবিরা দাবি করেন, যারা এ ভাবে দিনের পর দিন বিধায়কের নাম করে এলাকায় বোমাবাজি করছে, গুলি ছুড়ছে তারা আদৌ তাঁর লোক কি না, তা জানার জন্যই এই বিক্ষোভ। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ সেখানে এসে বিক্ষোভে আটকে পড়েন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা। আটকে থাকেন ঘণ্টাখানেক। তবে তিনি গাড়ি থেকে নামেননি।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধায়ক তৃণমূলের এই এলাকার পর্যবেক্ষক তথা বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ফোন করে ঘটনার কথা জানান। তার পরে পুলিশ গিয়ে রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। বিধায়ক-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, ব্লক সভাপতির অনুগামীদের অভব্যতায় বাধা দেওয়ায় কাশেমনগরে মেলা কমিটির এক জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ধরপাকড়ের নামে পুলিশ গ্রামে অত্যাচার শুরু করেছে। সে জন্যই মন্ত্রী এ দিন কাশেমনগরে আসেন। আসার পথে তাঁর গাড়ি আটকানোর চেষ্টা হয়।

মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা ফোন ধরেননি। তবে তাঁর পরিচিত, স্থানীয় গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের সদস্য নীলমাধব বৈরাগ্য বলেন, ‘‘বহু প্রাচীন একটি মেলা হচ্ছে কাশেমনগরে। তাকে ঘিরে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক, মন্ত্রী চান না। সে জন্য যা-ই ঘটে থাকুক, সে নিয়ে মন্ত্রী মুখ খুলতে চান না।’’ ব্লক সভাপতি অপূর্ববাবুর বক্তব্য, ‘‘এই রকম ঘটনা কেন ঘটল, বলতে পারব না। যাঁরা বিক্ষোভ করেছেন ও যাঁকে ঘিরে হয়েছে, তাঁরাই বলতে পারবেন। তবে দল পুরো বিষয়টির উপরে নজর রাখছে।’’ অনুব্রত বলেন, ‘‘এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। তার পরে বিধায়কের যাওয়ার দরকার কী? মহিলারা বিক্ষোভ দেখালে আমরা কী করতে পারি? উনি উন্নয়নের কাজ করুন, সংগঠন আমরা দেখছি।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও (কাটোয়া) ত্রিদিব সরকার। পুলিশ জানায়, কিছু মহিলা রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রামে পুলিশি অত্যাচারের কথা আধিকারিকেরা মানতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Group Clash Agitation TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE