ডুলি বিকল হয়ে পড়ায় বারবার ভুগতে হচ্ছে খনিকর্মীদের। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের তাতে হেলদোল নেই। সাতগ্রাম খনিতে শনিবার ডুলি খারাপ হওয়ার পরে এমনই অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনগুলির। ইসিএলের কর্তাদের অবশ্য দাবি, নিয়মতি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ডুলির।
শনিবার সাতগ্রাম প্রজক্টের ডুলি খারাপ হয়ে পড়ায় শ’খানেক কর্মী খনির নীচে আটকে পড়েন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে ডুলি সারাইয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলেও কর্মীরা উপরে উঠতে চাননি। উল্টে, খনির নীচে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। শেষে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁরা খনি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে উঠে আসেন।
খনিকর্মীদের ক্ষোভ অবশ্য ঘটনার পরেও কমেনি। তাঁদের অভিযোগ, দিন পাঁচেক আগেই ডুলির একটি লোহার গার্ডার ভেঙে যাওয়ায় ভূগর্ভ থেকে ৫০ ফুট দূরে ঘণ্টা দুয়েক আটকে থাকতে হয়েছিল ১৮ জন শ্রমিককে। তার পরে আবার শনিবার ডুলি সারাইয়ের কাজের জন্য নির্ধারিত সময়ে উপরে উঠে আসতে পারলেন না শ’খানেক কর্মী। তাঁরা জানান, প্রথম পালির ছুটি হয় বিকেল ৪টে নাগাদ। সুতরাং, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ থাকলে তা আগেই সেরে রাখা উচিত। কিন্তু, সে দিন বিকেল ৪টে নাগাদই সারাইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল বলে তাঁদের দাবি। এ জন্য খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। খনি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন ভূগর্ভে বসেই আটকে পড়া শ্রমিকেরা দাবি করতে থাকেন, তাদের এ ভাবে আটকে থাকতে হওয়ার জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
নানা শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসের শেষ দিকে বাঁকোলা এরিয়ার খান্দরা কোলিয়ারির এনকেজি ইউনিটে ডুলি খারাপ থাকায় জনা পঞ্চাশ কর্মীকে দু’ঘণ্টার বেশি সময় ভূগর্ভে আটকে থাকতে হয়। ওই কোলিয়ারির সিটু নেতা রাজেন সামন্ত জানান, এপ্রিলে ওই কোলিয়ারির ভিকে ইউনিটে একটি ডুলি খারাপ হয়। ডিজিএমএস জানিয়ে দিয়েছে, নতুন একটি যন্ত্রাংশ কিনতে হবে, যার দাম ১০ লক্ষ টাকা। খনি কর্তৃপক্ষ অগস্টে সেই কাজ শেষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
আইএনটিইউসি নেতা বাবলু সিংহ অভিযোগ করেন, সাতগ্রাম এরিয়ার জেকে নগর প্রজেক্টে বারবার ডুলি খারাপ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন কর্মীরা। শেষ ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ডুলি উপর থেকে নীচে আছড়ে পড়ায় পাঁচ কর্মী জখম হন। আইএনএমডব্লুএফ-এর অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়, সিটু নেতা নিরালা নুনিয়ারা দাবি করেন, ডুলিগুলি চলছে পুরনো প্রযুক্তিতে। নতুন কোনও খনিতে আর এই পদ্ধতি মেনে চলে না। নতুন খনিতে সিঁড়ি খাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরনো প্রযুক্তিতে কাজ করতে গিয়ে অনেক বেশি টাকা খরচও করতে হচ্ছে। কারণ, এর যন্ত্রাংশের দাম অনেক বেশি। অনেক সময় আবার যন্ত্রাংশ মেলে না। তার উপর কর্তৃপক্ষের এমন দায়সারা মনোভাবে অনেক সময়ে শ্রমিক-কর্মীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
ইসিএলের ডিরেক্টর টেকনিক্যাল (অপারেশন) সুব্রত চক্রবর্তী এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে সংস্থার এক আধিকারিকের দাবি, পুরনো প্রযুক্তির জন্য অসুবিধা হচ্ছে, এ কথা ঠিক নয়। ডিজিএমএস নিয়মিত পরিদর্শন করে। তাদের পরামর্শ মতোই ইসিএল নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। তা না করলে বড় দুর্ঘটনা ঘটত বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy