এই কুয়োগুলিতেই সমস্যা। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
খোলামুখ খনি সম্প্রসারণের জেরে জল-সঙ্কট তীব্র হতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। এই পরিস্থিতিতে পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি, পুকুর ও দামোদরের জল ব্যবহার করতে হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা। এই চিত্র রানিগঞ্জ ব্লকের এগারা পঞ্চায়েতের নতুন এগারা গ্রামের।
বছর পাঁচেক আগে গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ইসিএলের কুনস্তোরিয়া এরিয়ার নারায়ণকুড়ি খোলামুখ খনি চালু করেছে। ছ’মাস আগে খনি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। সম্প্রসারণের জেরে খনি এলাকা বিস্তৃত হয়েছে গ্রামের সীমানা পর্যন্ত।
এই গ্রামে পদ্মপাড়া, সিংহপাড়া, স্কুলপাড়া, মুচিপাড়া, গড়াইপাড়া, বাদ্যকরপাড়া, কাদিমাপাড়া, ধীবরপাড়ায় সাতশোরও বেশি পরিবারের বাস। প্রতিটি পাড়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কল রয়েছে। তাতে ঘণ্টাখানেক জল পড়ে। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটে না বলে অভিযোগ। গড়াইপাড়ার বাসিন্দা তুষারকান্তি খাঁ, সিংহপাড়ার হারাধন মণ্ডল, মুচিপাড়ার বাসিন্দা ভূতনাথ বাদ্যকরেরা জানান, কলের জল রান্নার কাজে ও পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এত দিন স্নান করা-সহ দৈনন্দিন অন্য কাজের জন্য পাঁচটি সরকারি কুয়োর জল বাসিন্দাদের একাংশ ব্যবহার করতেন। এ ছাড়াও অনেক বাড়িতেই কুয়ো রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, সম্প্রসারণের জেরে খনি এলাকা গ্রামের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ার পরে গ্রামের ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। ফলে গত ছ’মাসে কুয়োগুলির জল শুকোতে শুরু করে। মাস দুয়েক আগে থেকে কুয়োর জল তলানিতে ঠেকেছে। বাসিন্দারা জানান, এর জেরে দু’টি পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি ও পুকুরের জল ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেকে এক কিলোমিটার দূরে দামোদরে গিয়ে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। তুষারকান্তিবাবুর আশঙ্কা, “গ্রীষ্মে জল-সঙ্কট আরও তীব্রতর হবে।”
নতুন এগারা গাঁধী প্রাথমিক বিদ্যাপীঠের মিড-ডে মিল রান্নার কাজে যুক্ত মঞ্জু মণ্ডল। তিনি জানান, ছ’মাস ধরে তাঁদের স্কুলের চাপাকলে জল অনিয়মিত। মাঝেসাঝে জল পড়লেও তা নোংরা। এই পরিস্থিতিতে পাঁচশো মিটার দূর থেকে জল এনে রান্নার কাজ করছেন তাঁরা।
তবে বিডিও (রানিগঞ্জ) শেখর সাঁই জানান, প্রাথমিক স্কুলের চাপাকলের জলকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ ভাবে পরিস্রুত করার প্রক্রিয়া চলছে। সেই জল গ্রামের একাংশের বাসিন্দারাও নিখরচায় ব্যবহার করতে পারবেন। বিডিও-র সংযোজন: ‘‘আমি ও রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনোদ নুনিয়া একসঙ্গে নতুন এগারা গ্রামের জল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছি। ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেকটাই নীচে নেমে গিয়েছে।’’ ব্লক প্রশাসন জানায়, এর আগে অদূরে নারায়ণকুড়ি-মথুরাচণ্ডী ঘাটের সামনে বোরহোল করে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়েও জল মেলেনি। নতুন এগারা গ্রামের অন্য একটি চাপাকলে জল পড়ে। সেখান থেকেও বিশেষ পদ্ধতিতে জল তোলার তোড়জোড় চলছে। সেই জল একটি জলাধারে ধরে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকায় সরবরাহ করা হবে। এই কাজের খরচ বহন করবে ইসিএলের কুনস্তোরিয়া এরিয়া, জানান বিডিও। কুনস্তোরিয়া এরিয়ার পার্সোনেল ম্যানেজার আবির মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে কত খরচ হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে খরচ ইসিএল বহন করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy