Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
জোর সচেতনতা প্রসারেও

পশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র

প্রত্যন্ত গ্রামে পরিষেবা পৌঁছে দিতে ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করল রাজ্য প্রাণিসম্পদ দফতর। ওই দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, পশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকবে এই কেন্দ্রে। প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে ভ্যানটি হাঁস, মুরগি, ছাগলদের টীকাকরণ-সহ রোগের প্রতিষেধক দেবে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

প্রত্যন্ত গ্রামে পরিষেবা পৌঁছে দিতে ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করল রাজ্য প্রাণিসম্পদ দফতর। ওই দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান, পশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকবে এই কেন্দ্রে। প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে ভ্যানটি হাঁস, মুরগি, ছাগলদের টীকাকরণ-সহ রোগের প্রতিষেধক দেবে। ৩২টি ব্লকে এই কেন্দ্র তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে বলেও মন্ত্রীর দাবি। প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় তিন বছরে ধাপে ধাপে এই প্রকল্পে ১৭ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করা হবে। গ্রামের মানুষদের পশুপালনের নানা বিষয় নিয়ে সচেতনও করবে এই ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র।

দেড় দশক আগেও পঞ্চায়েত স্তরে গৃহপালিত পশুদের চিকিৎসার জন্য তেমন উন্নত পরিকাঠামো ছিল না। পশু চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে এক জনের বেশি প্রাণিসম্পদ বিকাশ সহায়কের দেখাও মিলত না। বর্তমানে নিয়োগ না হওয়ায় বেশির ভাগ পঞ্চায়েত থেকেও পদটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আবার কোথাও ব্লক অথবা প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে এঁদের তুলে আনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে এলাকায় গিয়ে পরিষেবা দিতে সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র। দফতরের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়া, গাড়ি সাজানো-সহ বেশির ভাগ কাজই শেষ। এমনকী উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা তিনটি করে ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাঁকুড়ায় ৪টি, বর্ধমানে ৩টি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১টি ও শিলিগুড়িতে ৮টি ভ্যানে কাজ চলছে বলেও জানা গিয়েছে। ওই দফতরের দাবি, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়াই প্রকল্প রূপায়নের জন্য বাছা হয়েছে জঙ্গলমহল এলাকার ব্লকগুলি। প্রাণিসম্পদ দফতরের রাজ্য পর্যায়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই তিন জেলার জঙ্গলমহল এলাকাগুলিতে স্বাভাবিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া কঠিন। এলাকার মানুষরা যাতে আরও বেশি প্রাণীপালনে আকৃষ্ট হন সে জন্যই এমন সিদ্ধান্ত।’’ একই কারণে উত্তর চব্বিশ পরগণায় সুন্দরবন এলাকার ৩টি ব্লক বাছা হয়েছে। বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ অলোক মাঝি বলেন, ‘‘৩০ জুন দুর্গাপুরে হুল দিবসের অনুষ্ঠানে একটি গাড়িকে সামনে রেখে এই পরিষেবার উদ্বোধন হয়েছে। আউশগ্রাম ২, পূর্বস্থলী ২ এবং মেমারি ২ এলাকায় এই পরিষেবা প্রথম চালু হচ্ছে।’’ অলোকবাবু আরও জানান, শুধু চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া নয়, ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রটি থেকে প্রাণিসম্পদ নিয়ে প্রচারও করা হবে।

প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন সচেতনতা এবং শিক্ষামূলক ব্যানার ফেস্টুনে সাজানো গাড়িতে তিন জন করে থাকবেন। এক জন চিকিৎসক ও বাকি দু’জন সাহায্যকারী। ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট চুক্তিতে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। দফতরর সূত্রে খবর, চিকিৎসক হিসাবে চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত অথবা বেকার যুবকদের ওই কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ওই ভ্যানে গৃহপালিত প্রাণীদের জন্য প্রয়োজনীয় নানা রোগের ওষুধ, টীকা, এমনকী মল-মূত্র পরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকবে। মাসে ২০ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভ্যানটি এলাকায় ঘুরবে। প্রাণিসম্পদ দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্রতিটি জেলাতেই ভ্যাম্যমাণ কেন্দ্রগুলির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক একটি সংস্থাকে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি উন্নয়ন লিমিটেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্ধমান জেলার। দুই চব্বিশ পরগণার দায়িত্ব পেয়েছে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, নিমপীঠ। ভ্যানগুলির ভাড়া, ওষুধ কীভাবে ভ্যানে সংরক্ষণ করা হবে সে তালিকাও ওই সংস্থাগুলির হাতে পৌঁছে গিয়েছে বলে প্রাণিসম্পদ দফতরের দাবি। আপাতত তিন বছর ভ্যানগুলি গ্রামে গ্রামে ঘুরে পরিষেবা দেবে। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ দফতরের অধিকর্তা সুভাষ বসু বলেন, ‘‘মোবাইল ভ্যানগুলি থেকে উন্নত পরিষেবায় নয়, সাধারণ মানুষ প্রাণী পালন সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবেন।’’ তাঁর দাবি, প্রথম দফায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ৪০টি প্রত্যন্ত এলাকাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পরে এই পরিষেবা আরও বাড়ানো হবে। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘বাড়ির পোষা হাঁস, মুরগির রোগবালাই হলে গ্রামের মানুষকে ছুটতে হয় দূরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নতুন পরিষেবায় ছোটখাটো একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাড়ির দরজায় পাবেন মানুষ।’’ এর সঙ্গেই মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে কিভাবে, কোন প্রজাতির পশু পালন করে বেশি লাভ মুখ দেখা যাবে তাও জানা যাবে।

তবে এই ভ্রাম্যমাণ পরিষেবা কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে প্রাণিসম্পদ দফতরের আধিকারিকদের মধ্যেই ভিন্ন মত রয়েছে। বর্ধমান জেলার কালনা ১ ব্লকের প্রাণিসম্পদ বিভাগের আধিকারিক সমীর শীল জানান, ভাবনাটি ভাল। পরিষেবা ঠিকঠাক পৌঁছলে গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রাণী পালনে আগ্রহ বাড়বে। আবার এই জেলারই আর এক আধিকারিকের কথায়, নিয়োগের অভাবে পঞ্চায়েত স্তরে প্রাণী চিকিৎসার পরিকাঠামো অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। মোবাইল ভ্যানের থেকেও ভেঙে পড়া পরিকাঠামোর উন্নতি হলে উপকার পেতেন মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE