ব্যাঙ্কের নাম করে ফোন করে গ্রাহকদের ডেবিট কার্ডের তথ্য জেনে টাকা হাতানোর ঘটনার বিরাম নেই শিল্পাঞ্চলে। ডেবিট কার্ড ‘লক’ হয়ে গিয়েছে, কার্ডের পুনর্নবীকরণ করতে হবে বা অ্যাকাউন্টের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে— এমন নানা অজুহাতে কার্ডের নম্বর ও পিন চেয়ে নিয়ে বহু গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট সাফ করে দেওয়া চলছিল অনেক দিন ধরেই। ইদানীং অনেকে সচেতন হয়ে যাওয়ায় ছক পাল্টেছে দুষ্কৃতীরা। এখন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর যোগ করার নামে চলছে টাকা হাতানো। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্রাহকেরা সচেতন হলেই বন্ধ হবে এই প্রতারণা।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে আধার নম্বর চেয়ে ফোন করে এমন প্রতারণার দু’টি ঘটনা ঘটেছে দুর্গাপুরে। এমএএমসি কলোনির বাসিন্দা ধ্যান সিংহের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৯৯৯ টাকা গায়ের হয়েছে। ডিএসপি টাউনশিপের বি-জোনের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর সাউয়ের আমানত থেকে ধাপে-ধাপে তুলে নেওয়া হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
এই প্রতারণার চক্রের কারবার চলছে বছর পাঁচেক ধরে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ডেবিট কার্ড পুনর্নবীকরণের নাম করে এক সরকারি কর্মীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানো হয়। ২০১৪-র অগস্টে অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের নাম করে ফোনে তথ্য নিয়ে অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে এক গ্রাহকের প্রায় ৪১ হাজার টাকা খরচ করা হয়। সে বছর নভেম্বরেই ডেবিট কার্ড ‘লক’ হয়েছে জানিয়ে ঝাঁঝড়ার ইসিএলের দুই আধিকারিকের অ্যাকাউন্ট থেকে ধাপে-ধাপে ৪৮ হাজার ও ৩৬ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। বারবার এমন ঘটতে থাকায় গ্রাহকদের সচেতন করতে শুরু করে ব্যাঙ্কগুলি। তাতে কিছুটা ফল হয়। কিন্তু আবার খানিকটা ছক পাল্টে একই রকম প্রতারণা শুরু হয়েছে।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানান, ব্যাঙ্কে লাইন দিতে না চাওয়ায় বা সময়ের অভাবে অনেকে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার নম্বর সংযুক্তিতে গড়িমসি করেন। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে আসরে নেমেছে দুষ্কৃতীরা। ২০১৫-র নভেম্বরে বেনাচিতির এক গ্রাহককে ফোন করে বলা হয়, আধার নম্বর অ্যাকাউন্টে যুক্ত না করলে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে। সে জন্য ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর দরকার। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অনলাইন কেনাকাটায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৬ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়। একই ভাবে ডিএসপি টাউনশিপের এক বাসিন্দার অ্যাকাউন্ট থেকে সরানো হয় ১০ হাজার টাকা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাইয়ে আসানসোলের ইসমাইল থেকে এই রকম প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে ৯ জনের একটি দলকে গ্রেফতার করা হয়। মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কিছু যুবক এই কাজে জড়িত। পুলিশ ও ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, শুধু দুষ্কৃতীদের ধরেই এই প্রতারণা বন্ধ করা যাবে না। গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। আগে এটিএম কাউন্টারে ঢুকে হাতসাফাই করত দুষ্কৃতীরা। নিরাপত্তার কড়াকড়ির পরে ফোন করে প্রতারণা শুরু হয়। এক ব্যাঙ্ক আধিকারিক বলেন, ‘‘ডেবিট কার্ডের নম্বর ও পিন জানা থাকলে কার্ড ছাড়াই অনলাইনে কেনাকাটা, বিমান বা ট্রেনের টিকিট কাটা, মোবাইল রিচার্জ, এই সব করা যায়। এ সব তথ্য কাউকে কোনওমতেই জানানো উচিত নয়। গ্রাহকদের সচেতন করতে সব ব্যাঙ্কই ধারাবাহিক চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy