সারিসারি দাঁড়িয়ে বাস
ঘটনার সূত্রপাত একটি টোটো-র সঙ্গে কালনা রুটের একটি বাসের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, এর পরে মঙ্গলবার স্থানীয় যুবকদের ডেকে টোটো চালক বাসকর্মীদের উপরে চড়াও হন। এ ভাবে প্রায়ই স্থানীয় কয়েকজন ‘দাদাগিরি’ চালাচ্ছে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে। এ সবের অভিযোগে এবং ‘বিহিত’ চেয়ে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নানা দূরপাল্লা রুটের প্রায় ৫৫০টি বেসরকারি বাস বন্ধ রাখলেন বাসকর্মীরা।
বর্ধমান শহরের এক দিকে থাকা উল্লাস মোড়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে মূলত বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা, কলকাতার ধর্মতলা, করুণাময়ীর বাস চলে। নবাবহাট থেকে বর্ধমান উত্তর, কাটোয়া, কালনা মহকুমা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুর্গাপুর-আসানসোল ও কলকাতা রুটের বাস ছাড়ে। এ ছাড়া, বিভিন্ন রুটের সরকারি বাসের ডিপো হচ্ছে এই স্ট্যান্ড। তৃণমূল প্রভাবিত ‘কালনা বাস শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই ঘটনার বিহিত চেয়ে আমরা মঙ্গলবার বিকেল থেকেই বাস বন্ধ করে দিয়েছি। একই দাবিতে আন্দোলন করার জন্য নবাবহাটের বাসকর্মীদের কাছে আবেদন করেছিলাম। তাঁরা বুধবার সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন।’’
শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এ দিন স্ট্যান্ডে প্রায় ২,২০০ বাসকর্মী আন্দোলনে নামেন। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলবারের আগেও গত দু’-তিন মাসে বারবার স্থানীয়দের ‘দাদাগিরি’র সম্মুখীন হতে হয়েছে বাসকর্মীদের। অভিযোগ, কাটোয়া রুটের বাস ভাঙচুর, চালককে মারধর করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে নতুনহাট, গলসির আদ্রাহাটির রুটের বাস চালকদের সঙ্গেও। আরও অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে স্ট্যান্ড চত্বরে অসামাজিক কাজ চলে।
শেখ আখতার আলি নামে এক বাস মালিকের অভিযোগ, “স্থানীয়দের দাদাগিরির শিকার হতে হচ্ছে বাস-কর্মীদের। আমরাও তার থেকে রেহাই পাচ্ছি না।’’ নাসিরুদ্দিন শেখ, মহম্মদ শামিম, ভৈরব মুখোপাধ্যায়দের দাবি, “স্থানীয়দের এমন ‘অত্যাচার’ অন্য কোনও স্ট্যান্ডে নেই। এমনটা চলতে থাকলে বর্ধমান শহরে ঢোকার মুখে যাত্রী নামিয়ে দিতে হবে।’’ আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘ওয়েস্টবেঙ্গল রুট ট্রান্সপোর্ট শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠন’-এর নেতা সুরেন্দ্র শর্মা জানান, প্রশাসনের কাছে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ ক্যাম্প তৈরি এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তেরা এলাকায় তৃণমূলকর্মী হিসেবে পরিচিত। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য নূরুল হাসান। তবে তিনি বলেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করুক। সবার সঙ্গে আলোচনা করে মীমাংসার সূত্র বার করা হয়েছে।’’ আলোচনায় যোগ দেওয়া তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক খোকন দাস বলেন, “কর্মচারীদের পরিষেবা সংক্রান্ত দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।’’ সূত্রের খবর, বুধবারই বিকেলের পরে থেকে কিছু বাস চলতে শুরু করে।
কিন্তু দিনভর বাস না চলায় কাটোয়া, কালনা, নবদ্বীপ, নতুনহাট, গুসকরা, গলসি, বোলপুর-সহ নানা রুটের মানুষেরা বিপাকে পড়েন। সকাল থেকে বাজেপ্রতাপপুরের দিকে রেল ওভারব্রিজের তলায় প্রচুর মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ‘সুযোগ’ বুঝে টোটো চালকেরাও দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছেন বলে জানান যাত্রীরা। কাটোয়ার শ্যামলী হালদার, কালনার শেখ নওয়াজউদ্দিনদের চিকিৎসার জন্য দেড়-দু’হাজার টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে। কালনার অনেককেই হুগলির বৈঁচি পর্যন্ত বাসে এসে তার পরে মেন লাইনে বর্ধমান আসতে হয়েছে।
জেলা পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) রানা বিশ্বাসের অবশ্য আশ্বাস, “বাসকর্মীদের দাবি নিয়ে আরটিও বোর্ডে আলোচনা হবে। পুলিশকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy