Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ তরুণের স্মৃতি নিয়েই পুজো পাড়ায়

ঠক ঠক...। প্যাণ্ডেলে পেরেক ঠুকে রঙিন কাপড় বাঁধার কাজ শেষ হয়েছে। রাত পেরোলেই মহাষষ্ঠী।

বিষাদ নিয়েই: শ্রীপল্লির শ্রীসঙ্ঘে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।

বিষাদ নিয়েই: শ্রীপল্লির শ্রীসঙ্ঘে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

ঠক ঠক...। প্যাণ্ডেলে পেরেক ঠুকে রঙিন কাপড় বাঁধার কাজ শেষ হয়েছে। রাত পেরোলেই মহাষষ্ঠী। কিন্তু রং, এই শব্দটাই যেন এ বার এই পাড়া থেকে, পাড়ার পুজো থেকে মুছে গিয়েছে। পুজোর তোড়জোড়ের মাঝে যে সব ছেলেগুলোকে উজ্জ্বল দেখাত, সেই মুখগুলোই যে আজ আর নেই।

পাড়াটি, আসানসোলের শ্রীপল্লি। আর ওই ছেলেগুলো, প্রতীক চট্টোপাধ্যায়, সিন্ধু কাজী, রাহুল দেবনাথ, পরিচয় চট্টোপাধ্যায় ও দেবু রায়। গত বছর ডিসেম্বরে বার্নপুরের ঢাকেশ্বরীতে পিকনিক করতে গিয়ে দামোদরে তলিয়ে যায় পাঁচ তরুণ। প্রায় ১৬ ঘণ্টা বাদে উদ্ধার হয় দেহ।

দিনটার কথা মনে করলেই এখনও ছ্যাঁৎ করে ওঠে বুকটা, বলছিলেন শ্রীপল্লির শ্রীসঙ্ঘ পুজো কমিটির সম্পাদক রানা চৌধুরী। পকেট থেকে রুমাল বার করে, খানিক ধীরে ধীরে বলতে থাকেন তিনি, ‘জানেন, তবুও সামলে উঠেছিলাম আমরা। কিন্তু পুজো যেন ফের ওঁদের কথা নতুন করে মনে পড়াল।’

পড়ানোটাই স্বাভাবিক। এলাকাবাসী জানান, চাঁদা আদায় করা, ঠাকুর আনা, পুজোর অনুমোদনের জন্য তোড়জোড় করা, মণ্ডপ পাহারা, আলোর ব্যবস্থা, ডেকরেটরের সাজসজ্জা কী হবে, সবেতেই অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যেত ওই পাঁচ জনকে। ‘‘পুজো আয়োজনের সমস্ত খুঁটিনাটি দিক ওঁদের খেয়ালে থাকত। ওদের অনুপস্থিতিতে যেন হোঁচট খাচ্ছি আমরা’’, বলছিলেন পুজোর অন্যতম আয়োজক তথা কাউন্সিলর বাবন বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই পাঁচ জন আর নেই। সে কথা মনে করে মুষড়ে পড়েছেন তাঁদের বন্ধু ও অন্য উদ্যোক্তারাও। বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় নামে এক জন বলেন, ‘‘পাড়ার সবার পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হলে ক্লাবের সদস্যরা পুষ্পাঞ্জলি দিই। এ বার ওরা পাশে থাকবে না, এটা ভাবতেই কেমন লাগছে।’’

ওই পাঁচ জনের কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ হোড়। শেষমেশ কোনও মতে বললেন, ‘‘মাঝপথে পুজো বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমাদের মন ভেঙে গিয়েছে।’’

মন ভাঙারই কথা। কারণ পুজোর ক’টা দিন ওই পাঁচ জনের ঘর-বসত ছিল যে মণ্ডপটাই, জানালেন সিন্ধুর বাবা তথা কাজী নজরুল ইসলামের নাতি তরুণ কাজী।

তবে এ বার পুজোয় বাহ্যিক আড়ম্বর তেমন থাকছে না। পুজোর জন্য যতটা না হলেই নয়, সেটুকুই আয়োজন থাকছে। আর থাকছে, সুসজ্জিত বেদিতে পাঁচ জনের ছবি। ‘ওরা না থেকেও আমাদের সঙ্গে আছে, এই স্মৃতিটুকুই আমাদের ভরসা’, বলতে বলতে রানাবাবু ফোনে ধরার চেষ্টা করলেন ডেকরেটরকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE