এমন আপেল, কাঁঠাল নিয়েই উঠছে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
চকচকে স্টিকার সাঁটা আপেল দেখে এক ক্রেতা বললেন, ‘মনে হচ্ছে যেন মোম পালিশ।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানি জানালেন, ফলের গা চকচকে করতে অনেক আপেলে সত্যিই মোম দেওয়া থাকে।
কালনার চকবাজারে বিক্রি হওয়া পাকা কাঁঠালের বোঁটায় আবার গোলাপি রং। খোঁজ নিয়ে জানা গেল তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য রাসায়নিক দেওয়া হয়েছে।
ছাড় নেই আলু, পটলেরও। ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, ক্রেতাদের চোখ টানতে ঝাড়াই-বাছাইয়ের সময় আলুতে মেশানো হয় রং। পটল ডোবানো হয় সবুজ রঙে। তাজা ভেবে সেগুলিই কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা।
জৈব চাষে যেখানে এত জোর, প্রায়ই যেখানে চাষিদের নিয়ে বৈঠক করে চাষে রাসায়নিক ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়, সেখানে ফল-আনাজের গুণমান প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যায় কী ভাবে? কর্তারা অবশ্য নজর এড়িয়ে যাওয়া মানছেন না। কালনার পুরপ্রধান, মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। মাস ছয়েক আগে কালনা ২ ব্লকের দুই ব্যবসায়ীর নামে আলুতে রং দেওয়ার অভিযোগ হয়েছে। বাজারেও অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে কয়েকজনকে। কিন্তু ভেজাল যদি বন্ধই না করা যায় তাহলে এমন অভিযানে লাভ কী— প্রশ্ন করছেন শহররবাসী।
কালনা শহরের বাসিন্দা তন্ময় ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘ফল, আনাজ ভাল কি না চোখে দেখে বা হাত দিয়ে সবসময় বোঝা যায় না। ভাল জিনিস ছেলেমেয়ের মুখে তুলে দিতে প্রশাসন যদি পাশে না দাঁড়ায় তাহলে কার উপর ভরসা করব?’’ ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা চম্পা বসাকও বলেন, ‘‘আমরা তো রং দেখেই ফল পাকা কি না, আনাজ ভাল কি না বিচার করি। এ ভাবে চললে তো মুশকিল।’’
জানা যায়, আনারস, কাঁঠাল, আম, টম্যাটো পাকাতে রাসায়নিকের ব্যবহার হয় বেশি। চক বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘রাসায়নিক দিলে ফলের উপরের অংশ তাড়াতাড়ি পাকে। ভাল রং ধরে, বিক্রি ভাল হয়।’’ কীটনাশক বিক্রেতাদের কাছেই এ ধরনের রাসায়নিক মেলে বলে জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, প্রতি বছর বর্ষার শুরুতে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি, চকবাজারে শিলিগুড়ি থেকে আনারস আসে। সেখান থেকেই রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে আনা হয়।
কালনা শহরের আশপাশের আলু ব্যবসায়ীরাও জানান, হলুদ রং লাগালে আলুর গায়ের ফাটা, পচা, কাটা দাগ থাকলে বোঝা যায় না। তাই অনেকসময় রং লাগানো হয়। যদিও নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির এক কর্তার দাবি, ‘‘আমরা মাঝেমধ্যেই বাজারে বিক্রি হওয়া জিনিসপত্র খুঁটিয়ে দেখি। মান খারাপ দেখলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ পুরসভার এক আধিকারিকের আবার দাবি, ‘‘এখন সবেতেই রাসায়নিক। প্রতিদিন সব বাজার ঘোরা তো সম্ভব নয়।’’
তাহলে উপায়?
কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র গড়াই বলেন, ‘‘টানা রাসায়নিক দেওয়া খাবার খেলে কিডনির অসুখ, লিভারের সমস্যা, চোখের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আনাজ বারবার ধুয়ে, জলে ভিজিয়ে রেখে খাওয়া ভাল।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy