Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অণ্ডালে ব্যাঙ্কমিত্র কেন্দ্রের কর্মী খুন

ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অণ্ডাল শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও নিজেদের দোকানে কাজ করছিলেন দু’জনে। আচমকা গুলির আওয়াজ, সেই সঙ্গে চিৎকার, ‘বাঁচাও বাঁচাও’। দোকান ছেড়ে বাইরে বেরোতেই তাঁরা দেখেন, এলাকারই ব্যাঙ্কমিত্র কেন্দ্রের কর্মী রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় ওই কর্মীর। অণ্ডালের জামবাদ বেনিয়াডিহি মোড় এলাকার ঘটনা। নিহত সুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় (৩২) বেনিয়াডিহি এলাকারই বাসিন্দা।

কিন্তু কেন ও কী ভাবে খুন? আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (পূর্ব) বিমলকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ছিনতাইয়ে বাধা পেয়েই এই ঘটনা। দুষ্কৃতীরা স্থানীয় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ বিশেষ সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, দু’জন মোটরবাইকে চড়ে এসে প্রথমেই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ওই কেন্দ্রের ভিতরে ঢোকে। সেই সময়ে সুপ্রকাশের সামনের টেবিলে রাখা ছিল টাকাভর্তি ব্যাগ। সেই ব্যাগটি দু’জনে ছিনিয়ে নিয়ে ওই ব্যাঙ্কমিত্রকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে তাদের কাছ থেকে ফের ব্যাগটি কেড়ে নিতে যান সুপ্রকাশ। তখনই চলে গুলি। পুরো ঘটনাটি ঘটেছে মিনিট পাঁচ-ছ’য়েকের মধ্যে। তদন্তকারীরা জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, রীতিমতো পরিকল্পনা করে আগেভাগে সব খবর নিয়েই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। দুপুরে এলাকায় লোকজন কম ছিল, লাগোয়া বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ ছিল। দুষ্কৃতীরা তাই এই সময় বেছে নিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান।

স্থানীয় ফুচকাওয়ালা মহেশ রজক এবং গ্যারাজ মালিক শেখ মোবারক জানিয়েছেন, ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টো ১০ মিনিট। গুলির আওয়াজ ও সুপ্রকাশের চিৎকার শুনে তাঁরা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই ব্যাঙ্কমিত্রকেন্দ্রের সামনে এসে দেখেন, অত্যন্ত দ্রুত লাল রঙের একটি মোটরবাইকে করে দু’জন পরাশিয়ার দিকে চম্পট দিচ্ছে। পুলিশ জানায়, এলাকাবাসীর কাছ থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই দু’জনের মধ্যে যে মোটরবাইক চালাচ্ছিল, তার মাথায় ছিল হেলমেট। পিছনে বসা অন্য জনের মাথায় কাঁচাপাকা চুল। ওই ব্যাঙ্কমিত্রকেন্দ্রটির পাশেই বাড়ি সোমা দাস নামে এক মহিলার। তিনি জানান, যে সময়ে গুলির আওয়াজ মেলে, সেই সময় তাঁরা দুপুরের খাওয়া সারছিলেন। চিৎকার, গুলির আওয়াজ শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ব্যাঙ্কমিত্রকেন্দ্রের দরজার বাইরে পড়ে সুপ্রকাশ। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত অণ্ডাল থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে মিনিট পনেরোর মধ্যে পুলিশ এসে সুপ্রকাশকে উদ্ধার করে রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তাঁর বুকের মাঝে একটি গুলি লেগেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপ্রকাশের বাড়িতে রয়েছেন পেশায় খনিকর্মী বাবা জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাই, মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ে। তবে তাঁরা কেউই প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো অবস্থায় ছিলেন না। প্রায় আড়াই বছর ধরে ব্যাঙ্কমিত্র হিসেবে একটি বেসরকারি এজেন্সি সংস্থার হয়ে এজেন্টের কাজ করতেন সুপ্রকাশ। নানা প্রকল্পে এলাকাবাসীর জন্য অ্যাকাউন্ট তৈরি-সহ বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাজোড়া শাখার ম্যানেজার সন্দীপ দাস বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষ ভাবে উনি আমাদের কর্মী ছিলেন না। তবে আমরা খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলেও গিয়েছিলাম। পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করুক।’’

এলাকায় নির্বিবাদী বলে পরিচিত সুপ্রকাশকে খুনের ঘটনায় শোকগ্রস্ত পাড়া, পড়শিরা। নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত এলাকায় ছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (২) অভিষেক মোদী, স্থানীয় বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি প্রমুখ। জিতেন্দ্রবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করুক। আমরা পরিবারটির পাশে রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Andal Ploice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE