Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফুলঝুরি, চরকির আড়ালে বিক্রি চকলেট

সামনে শুধু ফুলঝুরি, চরকি, আতসবাজি। কিন্তু তারই আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে চকলেট, আলু। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে দীপাবলির আগে পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এ ভাবেই বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি। রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, শব্দবাজি এ বারও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

বার্নপুর স্টেশন রোডে বাজির পসরা। ছবি: শৈলেন সরকার

বার্নপুর স্টেশন রোডে বাজির পসরা। ছবি: শৈলেন সরকার

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১০
Share: Save:

সামনে শুধু ফুলঝুরি, চরকি, আতসবাজি। কিন্তু তারই আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে চকলেট, আলু। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে দীপাবলির আগে পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এ ভাবেই বিক্রি হচ্ছে শব্দবাজি।

রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, শব্দবাজি এ বারও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বাজার ঘুরে অবশ্য দেখা যায়, বিক্রেতারা সে নিষেধ মানতে খুব একটা ইচ্ছুক নন। কালীপুজো আসতে এখনও দিন পাঁচেক বাকি। বিক্রেতাদের মতে, শব্দবাজি বিক্রির এটাই নাকি মোক্ষম সময়। বার্নপুর স্টেশন রোডের এক খুচরো ব্যাবসায়ী যেমন জানালেন, পুজোর সাত-দশ দিন আগেই বাজার চড়তে শুরু করে। তাঁর স্টলের সামনে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়েই দেখা গেল, দিব্যি বিক্রি হচ্ছে বাজি। তবে সামনে শব্দবাজি রাখা নেই। সবই সেই ফুলঝুরি, চরকির আড়ালে। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, কালীপুজোর ঠিক দু’এক দিন আগে পুলিশের ‘উৎপাত’ হবে। কিন্তু সাত-দশ দিন আগে এ সব নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা থাকে না পুলিশ-প্রশাসনের। তাই এখন বিক্রিবাটা করা যায় নির্বিঘ্নে।

বার্নপুর স্টেশন রোড বাজারে সার দিয়ে বাজির দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেনাবেচা চলে। ব্যবসায়ীদের দাবি, আসানসোল বাজারের দোকানগুলিতে বিশেষ শব্দবাজি বিক্রি হয় না। কিন্তু বরাকর, কুলটি, রূপনারায়ণপুরে তার রমরমা রয়েছে। অভিযানে নেমে পুলিশ জেনেছে, ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া চিরকুণ্ডা, কুমারডুবি, জামতাড়া, মিহিজাম এলাকা থেকে নিয়মিত শব্দবাজি ঢুকছে। কারণ, এ রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ থাকলেও ঝাড়খণ্ডে তা অবাধে কেনাবেচা হয়। শুধু এখানকার ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে বাজি কিনে এনে বিক্রি করছেন, তা নয়। সীমানা এলাকার অনেক বাসিন্দা নিজেরাই সেখান থেকে বাজি কিনে আনছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫২ থেকে সাড়ে চারশো টাকা, নানা দামে বিক্রি হচ্ছে চকোলেট বোমা, বোতল বোমা, দোদোমার বাক্স। একটি বাক্সে থাকছে এক ডজন বাজি।

শহরে শব্দবাজি ঢোকার খবর রয়েছে প্রশাসনের কাছেও। তাই এ বার আগেভাগে অভিযানে নামা হচ্ছে বলে জানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশ। কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনামিত্র দাস জানান, ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে সব থানা এলাকায় বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করে শব্দবাজি ধরপাকড়ে নামা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড থেকে শব্দবাজি ঢোকার যে অভিযোগ এসেছে তা কড়া হাতে বন্ধের ব্যবস্থা হয়েছে। বাজি বাজারগুলিতে বিশেষ নজরদারি চলছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, রানিগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকায় প্রচুর শব্দবাজির কেনাবেচা হয়। এসিপি (সেন্ট্রাল) বরুণ বৈদ্য জানান, আসানসোল বাজার-সহ আশপাশে নজরদারি চলছে। রানিগঞ্জের যে সব এলাকায় শব্দবাজি তৈরির কারখানা আছে সেখানেও লক্ষ রাখা হচ্ছে। তাঁরাও গোপনে নজরদারি চালাচ্ছেন বলে জানান দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল শাখার আধিকারিক সুদীপ ভট্টাচার্য। শব্দের কম্পাঙ্ক মাপার জন্য শহরে নানা এলাকায় যন্ত্র বসানো হচ্ছে। শব্দবাজি সংক্রান্ত অভিয়োগ জানাতে পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE