Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাসের সাক্ষী ইঞ্জিন সংরক্ষণের দাবি বর্ধমানে

পূর্ব রেলের এক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একটি ইঞ্জিনকে বর্ধমান স্টেশনের কোথায় বসানো যেতে পারে সেই জায়গাও দেখে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

এই সেই ইঞ্জিন। —নিজস্ব চিত্র।

এই সেই ইঞ্জিন। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০১:৪২
Share: Save:

ইতিহাসকে ধরে রাখার তাগিদে এ বঙ্গের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চত্বরে স্টিম ইঞ্জিনকে সংরক্ষণ করে রেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই তালিকায় ব্রাত্য পূর্ব রেলের আর এক স্টেশন বর্ধমান। অথচ এই স্টেশনের এক প্রান্তে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৭৫ বছরের পুরনো তিনটে স্টিম ইঞ্জিন। সম্প্রতি ইঞ্জিনগুলি সংরক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছেন রেলকর্মী, নিত্যযাত্রীরা। পূর্ব রেলের এক ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার একটি ইঞ্জিনকে বর্ধমান স্টেশনের কোথায় বসানো যেতে পারে সেই জায়গাও দেখে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

এ রাজ্যে হাওড়া স্টেশনের বাইরে রয়েছে স্টিম ইঞ্জিন। আসানসোল-শিলিগুড়িতেও স্টিম ইঞ্জিন সর্বসমক্ষে রাখা রয়েছে। হাওড়া ডিভিশনের স্টিম ইঞ্জিন শোভা পাচ্ছে দিল্লি থেকে রাজস্থানের জয়পুরের রামবাগ প্যালেস হোটেলের সামনে। ১৯৯৬ সালের মার্চে ওই ইঞ্জিনটি কিনে নিয়েছিলেন জয়পুরের ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের নভেম্বরে একটি ইঞ্জিন কেনে ব্রিটেনের ব্রেকন মাউন্টেন রেলওয়ে কোম্পানি। সেটি এখন রয়েছে সারেতে। বর্ধমানের তিনটি ইঞ্জিনের গুরুত্বও কম নয় বলে রেলকর্মীদের দাবি।

রেল সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানে অবহেলিত ভাবে পড়ে থাকা ইঞ্জিনগুলি তৈরি করেছিল ইংল্যান্ডের স্ট্যাফোর্ডের ডব্লুজি বাগনান কোম্পানি। রেলের পরিভাষায় ওই ইঞ্জিনগুলির নাম ১০৫২৭, ৭৪১১ ও ৯৪৩১। তিনটে ইঞ্জিনই শেষ চলেছে ১৯৯৩ সালে। তারপর থেকে সিকি শতক ধরে রেলের লোকোতে পড়ে রয়েছে সেগুলি। রেলকর্মীরাদের একাংশ জানান, দেশে তো বটেই, এ বঙ্গেও বিভিন্ন স্টেশনের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করছে স্টিম ইঞ্জিন। সর্বসমক্ষে ওই ইঞ্জিনগুলি থাকায় আমজনতার মধ্যে তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। অথচ বর্ধমান স্টেশনে সেগুলি সংরক্ষণে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। পূর্ব রেলের ঐতিহ্য রক্ষাকারী কমিটির এক সদস্য বলেন, “ওই তিনটে ইঞ্জিনের মধ্যে একটি বর্ধমানে সংরক্ষণ করা হবে, আর একটি পূর্ব রেলের মিউজিয়ামে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরেকটি ইঞ্জিন নিয়ে মহীশূর ও জয়পুরের রাজ পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।”

ওই তিনটে ইঞ্জিন ছাড়াও বর্ধমান-কাটোয়া ও আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইন (এখন ওই লাইন দুটি ব্রডগেজে রূপান্তরিত) দুটির ছোট ছোট কামরাগুলি সংরক্ষণেও রেল কর্তৃপক্ষ জোর দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কাটোয়ায় গিয়ে ‘রেলওয়ে প্রিজারভেশন অব হিস্টরি’ কমিটির সদস্যরা কামরাগুলির বর্তমান অবস্থা দেখে এসেছেন। বেশ কয়েকটি ট্রেনের কামরা রয়েছে, সেগুলিকে আরপিএফ জওয়ানরা ঘিরে রেখে দিয়েছেন। এ ছাড়াও বর্ধমান-কাটোয়া লাইনের কৈচর স্টেশনে জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়া শতাব্দী প্রাচীন ‘সিগন্যাল’ ও ‘ইন্টার লকিং’ ব্যবস্থা অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। সেগুলিকেও পূর্ব রেলের মিউজিয়ামে রাখার ব্যাপারে ওই কমিটি প্রস্তাব দিয়েছে। পূর্ব রেলের ওই ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কাটোয়া ও কৈচর ঘুরেও গিয়েছেন।

বর্ধমানের নিত্যযাত্রী সমিতির নেতা কৃষ্ণবিনোদ যশ বলেন, “আমরা বারবার ইঞ্জিনগুলি রক্ষা করার দাবি করেছি। বর্ধমান স্টেশনে ওই ইঞ্জিন সংরক্ষিত করা হলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়বে।” রেলকর্মীরাও মনে করেন, ইঞ্জিনগুলি সংরক্ষিত হলে ইতিহাসও বাঁচবে। বর্ধমানের স্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারীর কথায়, “পুরোটাই চিন্তাভাবনার স্তরে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman steam engines বর্ধমান
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE