Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

‘এখানেই হত্যে দিতে হবে’

কাছেই থাকা রায়নার সেহারা গ্রামের পার্বতী সর্দার বললেন, ‘‘স্বামীর কোমরে অস্ত্রোপচার হবে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের তো বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। এখানেই হত্যে দিতে হবে।’’

প্রায় ফাঁকা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

প্রায় ফাঁকা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:০৮
Share: Save:

তিন দিন ধরে ভর্তি রায়নার উচালনের বাসিন্দা বছর দশেকের অভিজিৎ হেমব্রম। পা ভাঙা। অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু তা নির্ভর করছে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার উপরে।— রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানালেন ওই কিশোরের মা সরস্বতীদেবী।

কাছেই থাকা রায়নার সেহারা গ্রামের পার্বতী সর্দার বললেন, ‘‘স্বামীর কোমরে অস্ত্রোপচার হবে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের তো বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই। এখানেই হত্যে দিতে হবে।’’

— এমন এক-দু’টি ছবি নয়। রবিবারের হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতির জেরে ভোগান্তির এমনই ছবি দেখা গিয়েছে বলে জানান রোগীর পরিজনেরা। যদিও মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা উপাধ্যক্ষ উৎপল দাঁ বলেন, “কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সিনিয়র চিকিৎসকেরা আমাদের সাহায্য করে চলেছেন।’’

কর্মবিরতির জেরে পরিষেবা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে পরিষেবা নিতে আসা মানুষজনের মধ্যে সে রকম অভাব-অভিযোগ শোনা যায়নি। তবে রবিবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাঁদের পরিজনদের একাংশ পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।

ডাব পাড়তে গিয়ে কোমর ও পায়ে চোট পান গলসির জাগুলিপাড়ার মেহের আনসারি। তিনি ‘ক্যাজুয়াল্টি’ ব্লকের এক তলায় অস্থি বিভাগে সপ্তাহ দুয়েক ধরে ভর্তি। গত মঙ্গলবার অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। কিন্তু তাঁর পিসি সরিফা বেগমের বক্তব্য, “দিন বদলে ফের শুক্রবার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন সিনিয়র ডাক্তারেরা এসে জানালেন, জুনিয়রেরা কাজে যোগ না দিলে অস্ত্রোপচার হবে না। এ ভাবে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে দিনের পর দিন কাটাতে হবে? আমাদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই বলে এ ভাবে শাস্তি পাব?” ওই বিভাগে গত শুক্রবার থেকে একের এক রোগী ‘ছুটি’ নিয়ে চলে গিয়েছেন। হাতেগোনা তিন-চার জন ছাড়া বাকি শয্যা ফাঁকাই পড়ে রয়েছে বলে জানা গেল।

একই ছবি রাধারানি ওয়ার্ডে। সেখানেও চিকিৎসা নিয়ে নানা ক্ষোভ রয়েছে রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে। বেশির ভাগেরই দাবি, কখন ডাক্তার আসছেন, কখন যাচ্ছেন—কিছুই জানা যাচ্ছে না। গতানুগতিক ভাবে নার্সরাই কিছুটা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এ দিন সকালে সুপার উৎপলবাবু ও ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা হাসপাতালে আসেন। তাঁরা হাসপাতালের পরিষেবা ঠিক মতো চলছে কি না দেখার সময়ে হন্তদন্ত হয়ে এক চিকিৎসক ছুটে এসে অভিযোগ করেন, “স্যর, মেডিসিনের চিকিৎসক কম রয়েছে। তার উপরে এক জন অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক বর্ধমানের জিটি রোডের ধারে একটি হোটেলে বসে রয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে আসছেন না। ওঁর পরামর্শ খুবই জরুরি। উনি না এলে চাপে পড়ে যাব।’’ তাঁর ফোন থেকেই হাসপাতাল সুপার কথা বললেন। ফোন রেখে গম্ভীর মুখে অন্য বিভাগের দিকে রওনা দেন সুপার। জানা গিয়েছে, ওই শিক্ষক-চিকিৎসক এ দিন হাসপাতালেই পা রাখেননি। তাঁর বদলে অন্য এক শিক্ষক-চিকিৎসক এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।

এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, “রবিবার থেকে পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। এ ভাবে চললে ভগবানের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে। তাড়াতাড়ি কর্মবিরতি উঠলে সবারই মঙ্গল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman medical college Doctors Strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE