Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দুর্নীতির নালিশ নিয়ে হাইকোর্টে বিজেপি

গত মরসুমে তাঁর বেশ কয়েক জন আত্মীয় এক সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পাওয়ায় তিনি শিরোনামে এসেছিলেন। এ বার বর্ধমানের কালনা পুরসভা পরিচালনায় নানা দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িয়ে গেল পুরপ্রধান তথা বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর নাম। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও বিহিত না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। বীরভূমের সিউড়ি পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে দেখা করেছেন শাসকদলের অন্যতম ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। পুরভোটের ঠিক আগে দু’টি পুরসভায় পরপর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল অস্বস্তিতে পড়েছে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

গত মরসুমে তাঁর বেশ কয়েক জন আত্মীয় এক সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি পাওয়ায় তিনি শিরোনামে এসেছিলেন। এ বার বর্ধমানের কালনা পুরসভা পরিচালনায় নানা দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িয়ে গেল পুরপ্রধান তথা বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর নাম। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও বিহিত না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।

বীরভূমের সিউড়ি পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে দেখা করেছেন শাসকদলের অন্যতম ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। পুরভোটের ঠিক আগে দু’টি পুরসভায় পরপর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল অস্বস্তিতে পড়েছে।

বিধায়ক তথা পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আপাতত কালনা শহর তোলপাড়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গাড়ির ভুয়ো বিল দিয়ে পুরসভার টাকা নয়ছয়, সরকারি অনুমতি ছাড়া পুরসভার জমি জলের দরে বিক্রি করা এবং নামমাত্র ভাড়ায় পুরসভার সম্পত্তি পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ এক মহিলাকে ব্যবহার করতে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে চর্চা চলছে।

পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেন, “সব ভিত্তিহীন অভিযোগ। সবই নিয়ম মেনে হয়েছে। ভুল হলে তা শুধরেও নেওয়া হয়েছে।” তবে বিজেপি নেতা স্বপন ভট্টাচার্যের দাবি, ওই তিনটি ক্ষেত্রেই বেআইনি ভাবে পুরসভার টাকা নয়ছয় এবং ঘুষের বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত হলেই তা বেরিয়ে আসবে। সেই কারণেই আদালতে যেতে হয়েছে।

কালনা পুরসভা সূত্রের খবর, নথি অনুযায়ী পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান ও এগজিকিউটিভ অফিসারের সইয়ে যে সব বিল পাশ হয়েছে তার অধিকাংশই ডব্লিউ বি/৪২ভি-৫৬৪৮ গাড়ির নম্বর দিয়ে। এই নম্বর দেখিয়ে সুদেব সাহা, সুখেন সাহা এবং রাজু সূত্রধর নামে তিন ব্যক্তি অজস্র বার গাড়ি ব্যবহার করে বিল তুলেছেন। ওই তিন জন বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অথচ এলাকায় ওই নম্বরের কোনও গাড়ি নেই। বর্ধমান সদরে এক মহিলার ওই নম্বরে একটি গাড়ি রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে ওই গাড়ি কী ভাবে কালনা পুরসভার কাজে ব্যবহার হল?

পুরপ্রধানের ব্যাখ্যা, “গাড়ির নম্বর বিলে লিখতে ভুল হয়েছিল। গাড়িটির নম্বর লেখা হয়েছিল ডব্লিউ বি/৪২ভি-৫৬৪৮, সেটা হবে ডব্লিউ বি/৪২ভি-৫৬৪৯। ভুল ধরা পড়ার পরে আমরা তা শুধরেও নিয়েছি।” তাঁর দাবি, ডব্লিউ বি/৪২ভি-৫৬৪৯ নম্বরের গাড়িটি তাঁর নিজের। চুক্তি করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গাড়িটি দু’জনকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন।

বিজেপির অভিযোগ, একই জায়গায় যাওয়ার জন্য এক-এক বার এক-এক রকম দূরত্ব লিখে টাকা তোলা হয়েছে। যেমন, গত ১৫ মে একটি গাড়ি কালনা থেকে সল্টলেকে পুর দফতরে সুডা কার্যালয়ে গিয়েছিল। যাতায়াতের দূরত্ব দেখানো হয় ২৫৩ কিলোমিটার। মাস দুয়েক আগে ওই একই দূরত্বের জন্য ৪০০ কিলোমিটারের বিল করা হয়েছিল। এ ভাবেই কখনও দূরত্বে গরমিল দেখিয়ে, কখনও ভুয়ো বিল জমা করে পুরসভা থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। পুরবোর্ডের কাছ থেকে এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

পুরসভার একটি জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়েও বড় ধরনের বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে তৎকালীন বোর্ড আবর্জনা ফেলার জন্য পঙ্কজ পাল নামে এক জনের কাছ থেকে জিউধারা মৌজায় প্রায় সাত বিঘা জমি কেনে। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা সেখানে আবর্জনা ফেলতে বাধা দেন। ২০১২ সালে জমিটি বিক্রির জন্য পুরসভা দরপত্র আহ্বান করে। তাতে বলা হয়, সর্বোচ্চ দরপত্রকারীকে ৯৯৯ বছরের লিজে জমিটি দেওয়া হবে। রাজেন্দ্র ভকত নামে এক জন ১৬ লক্ষ ১১ হাজার টাকার দরপত্র দিয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে তিনি পিছিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরপত্রকারী নিমাই দাস ও সুকান্ত পালকে সুযোগ দেওয়া হয়। এ বছর ২৭ এপ্রিল তাঁরা লিজের এক লক্ষ টাকা জমাও দেন। পুরসভা তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি টাকা দিতে বলে।

পুরসভার নথি বলছে, এর এক বছর পরে লিজের মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি সুকান্ত পালকেই জমিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। বিজেপি নেতাদের দাবি, সাধারণত পুরসভার কেনা সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে তা করা গেলেও তার জন্য সরকারি অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনুমতি তো নেওয়া হয়ইনি, উল্টে পুরনো দরপত্র বাতিল করে সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, যা পুরোপুরি বেআইনি। পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেন, বোর্ড কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মেনেই সব কিছু করা হয়েছে। কোনও বেনিয়ম হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে ব্যাঙ্ক বাজারে মাসিক মাত্র ৫০ টাকায় পুরসভার ঘর একটি মহিলা সমবায়কে ভাড়া দেওয়া নিয়েও। পুরপ্রধানের বক্তব্য, মহিলা সমবায়কে সস্তায় ঘর দেওয়ার বিষয়টি আগের বোর্ডের আমলে ঘটেছিল। কিছু লোক পুরসভাকে হেনস্থা করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুলভাল অভিযোগ করছে। স্বপনবাবুর বক্তব্য, “স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও লাভ না হওয়ায় হাইকোর্টে যেতে হয়েছে। আশা করি, আদালত নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kedarnath bhattacharya kalna corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE