Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরপর বোমা, নেপথ্যে কি গোষ্ঠী কোন্দল

স্থানীয় লোয়া-রামগোপাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিম মল্লিক অভিযোগ করেন, ‘‘গ্রামেরই তৃণমূল নেতা হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এক দল লোক বাড়ি ঘিরে বোমা ছুড়তে শুরু করে।’’

ভেঙেছে বাড়ির চাল, ফ্যান। —নিজস্ব চিত্র

ভেঙেছে বাড়ির চাল, ফ্যান। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গলসি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৪
Share: Save:

গ্রামের তৃণমূল নেতার বাড়িতে গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান চলছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে দলেরই কয়েক জন বাড়ি ঘিরে বোমা ছোড়ে। যদিও অভিযুক্তদের পাল্টা দাবি, তাঁদেরই লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১২টি বাড়িতে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার তেতে উঠল গলসির ঢোলা গ্রাম।

ঘটনার সূত্রপাত বেলা ১২টায়। স্থানীয় লোয়া-রামগোপাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিম মল্লিক সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘বাড়িতে গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান চলছিল। সেই সময়ে গ্রামেরই তৃণমূল নেতা হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এক দল লোক বাড়ি ঘিরে বোমা ছুড়তে শুরু করে। দাদার বাড়িতেও বোমা ছোড়া হয়। বৌদি ডলি মল্লিক জখম হন।’’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাফিজুরের ছেলে মুলফিক্কার বলেন, ‘‘হাকিমের নেতৃত্বে আমাদের অনেক আত্মীয়, পড়শির বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বোমা মারা হয়েছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ১২টা থেকে টানা আধ ঘণ্টা ধরে গ্রামে অন্তত ৪০টি বোমা ফাটার আওয়াজ শোনা যায়। হাকিমের বাড়ির অদূরে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের সামনেও পরপর বোমা পড়ে। ভাঙচুর চলে তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয়েও। মুলফিক্কারের অভিযোগ, ‘‘আমরা ওই কার্যালয়ে বসতাম। সেটির দখল নিতেই পাশের রায়পুরের বাসিন্দা, তৃণমূল নেতা জাহির আব্বাস মণ্ডলের (সিপাই) লোক জন হাকিমের নেতৃত্বে এই হামলা চালায়।’’ যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাকিম।

এই গোটা ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলকেই প্রকাশ্যে আনল বলে মনে করছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁরা জানান, এলাকায় হাফিজুর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি (গলসি ১) মহম্মদ মোল্লা এবং হাকিম দলের সংখ্যালঘু সেলের ব্লক (গলসি ১) সভাপতি জাহিরের (সিপাই) ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ প্রকাশ্যে আসে। এমনকি, টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে ভোটে হারেন হাফিজুর।

তবে বিবদমান দু’পক্ষ এই ঘটনাকে কোন্দলের জের বলে স্বীকার করেননি। জাহির বলেন, “আমি দুর্গাপুরে রয়েছি। আমার গ্রামের বেশির ভাগ লোকজন বর্ধমানে একটি মামলার শুনানিতে গিয়েছেন। এটা গ্রামের বিবাদ। পুলিশ তদন্ত করুক।’’ যদিও গ্রামে কোনও গোষ্ঠী নেই জানিয়েও মহম্মদ মোল্লা সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘রায়পুরের কিছু লোক জন হাকিমের বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, গ্রামের দলীয় কার্যালয়টি হাকিমের হাতে তুলে দেওয়ার। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে বোমা ছোড়া হয়।’’ কোন্দলের জেরে বোমাবাজির ঘটনা অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের ব্লক (গলসি ১) সভাপতি জাকির হোসেনও।

ঘটনার পরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ বাড়িতেই পুরুষ সদস্যেরা বাড়িতে নেই। গ্রামে যায় গলসি থানার পুলিশও। তবে পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের হয়নি। যদিও ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, স্কুলের সামনে এই ঘটনা ‘কাম্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন অবর স্কুল পরিদর্শক (গলসি পশ্চিম চক্র) দেবকুমার ভক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Galsi TMC Bomb
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE