Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওঝার দ্বারস্থ পরিবার, প্রাণ হারাল কিশোর

ওই পরিবারের অবশ্য দাবি, সাপে ছোবল মেরেছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে জানতে ওঝার কাছে ছুটেছিলেন তাঁরা। ওঝার পরামর্শে যতক্ষণে হাসপাতালে পৌঁছন ততক্ষণে নিথর হয়ে পড়েছে ওই কিশোর তুফান সরেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

এক বছর আগে সর্পদষ্ট বালিকাকে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার মাসুল দিয়েছিল পরিবার। আবারও একই ‘ভুলে’ প্রাণ হারাল ওই পরিবারের ১৭ বছরের এক কিশোর।

মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা প়়ঞ্চায়েতের ওই দ্বারসিনী গ্রাম থেকে কল্যাণপুরের ওঝার বাড়ি যত দূর, ন’কিলোমিটার দূরের মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে যাওয়া যায় তার থেকে কম সময়েই। ওই পরিবারের অবশ্য দাবি, সাপে ছোবল মেরেছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে জানতে ওঝার কাছে ছুটেছিলেন তাঁরা। ওঝার পরামর্শে যতক্ষণে হাসপাতালে পৌঁছন ততক্ষণে নিথর হয়ে পড়েছে ওই কিশোর তুফান সরেন।

মঙ্গলকোটের বিডিও মুস্তাক আহমেদ বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকাতেই নিয়মিত সচেতনতা প্রচার চালানো হয়। তার পরেও কী ভাবে এমন হল দেখা হবে।’’ তাঁর দাবি, সর্পদষ্ট হওয়ার একশো মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। রাজ্য বিজ্ঞান মঞ্চের কাটোয়া শাখার সম্পাদক জয়ন্ত সরকারের দাবি, অনেক আদিবাসী পরিবারে এ প্রবণতা রয়ে গিয়েছে। আরও তৃণমূল স্তরে প্রচার জরুরি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ঘরে একাই ঘুমিয়েছিল তুফান। ঘুমের মধ্যেই তার ডান পায়ের আঙুলে কিছু একটা কামড়ায়। বাড়ির কাউকে অবশ্য বিষয়টি জানায়নি সে। রাত ১টা নাগাদ শরীরে অস্বস্তি শুরু হলে মা বাসন্তী সোরেন এবং বাবা সঞ্জীব সোরেনকে বিষয়টি জানায় সে। ছেলের পায়ে কামড়ানোর জায়গা দেখে বাসন্তীদেবীর সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, ‘‘সাপটাকে দেখিনি। ফলে কিসে কামড়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্থানীয় এক ওঝার কাছে ছেলেকে নিয়ে যাই। ততক্ষণে ছেলের শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়।’’ তাঁর দাবি, আউশগ্রামের কল্যাণপুরে ওই ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তুফানের অবস্থা দেখে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওই ওঝা। ৪০ কিলোমিটার দূরের বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যেতে যেতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে ওই কিশোর। হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্বারসিনী গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেতে মিনিট পনেরো এবং বর্ধমান মেডিক্যালে যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। সময়ে আনা হলে হয়তো ওই যুবকের প্রাণ বাঁচানো যেত।

বারবার এমন ঘটনায় যথাযথ প্রচার, বিজ্ঞান মনস্কতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের দাবি, এখনও কিছু মানুষ প্রথমে ওঝার কাছেই ছোটেন। গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের প্রধান নবকুমার ঘোষের দাবি, সাপে ছোবল মারলে কী করা উচিত তা নিয়ে এলাকায় এবং স্কুলে প্রচার চালানো হয়। তবে সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছবে এমন ভাবে আরও প্রচার চালানো প্রয়োজন। মঙ্গলকোট ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণয় রায় জানান, খুব শীঘ্রই ওই এলাকায় গিয়ে প্রচার চালানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Snake Bite Mangalkot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE