Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বধূকে খুনে ধৃত দেওর

সপ্তাহ দুয়েক ধরে খোঁজ ছিল না বধূর। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নিখোঁজের দেওরকে জেরা শুরু করে পুলিশ। বধূকে খুন করে খনিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে শনিবার জামুড়িয়ার শ্রীপুরের নিউ সাতগ্রামে সেই দেওরকে গ্রেফতার করল  পুলিশ।

সরিতা গোপ।

সরিতা গোপ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েক ধরে খোঁজ ছিল না বধূর। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে নিখোঁজের দেওরকে জেরা শুরু করে পুলিশ। বধূকে খুন করে খনিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে শনিবার জামুড়িয়ার শ্রীপুরের নিউ সাতগ্রামে সেই দেওরকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক জেরায় জানিয়েছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে টানাপড়েনের জেরে বৌদিকে খুন করেছে সে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর ফাঁড়ি এলাকার বোগড়াচটি নিউ সাতগ্রাম নিচু ধাওড়ায় স্বামী রাজীব গোপকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন সরিতা গোপ (২২)। তাঁর বাবা বচ্চন যাদব অবসরপ্রাপ্ত খনিকর্মী। ওই এলাকাতেই বাড়ি রাজীবের। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সেখানেই থাকত রাজীবের ভাই ছোটু গোপ।

বচ্চনবাবু পুলিশকে জানান, ২৫ মে বিকেলে বাড়ি থেকে বেরোন সরিতা। আর ফেরেননি। ২৭ মে তিনি শ্রীপুর ফাঁড়িতে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তার পরেও কোনও হদিস না মেলায় ৩১ মে অজ্ঞাতপরিচয় লোকজন মেয়েকে অপহরণ করেছে বলে পুলিশে অভিযোগ করেন তিনি।

পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু করে সরিতার ফোনের ‘কল লিস্ট’ পরীক্ষা করা হয়। তা দেখে সন্দেহ হওয়ায় ৭ জুন ছোটুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় ছোটু জানায়, সরিতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি অন্য কারও সঙ্গে সরিতার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে সন্দেহ করছিল সে। তার জেরেই তাঁকে খুন করেছে সে। তদন্তকারীদের দাবি, ছোটু জানায়, ওড়নার ফাঁসে শ্বাসরোধ করে খুনের পরে দেহ বস্তায় ভরে নিউ সাতগ্রাম কোলিয়ারির ২ নম্বর পরিত্যক্ত খনিমুখ ঘেরা পাঁচিলের পাশে ফেলে দিয়েছিল সে। দুর্গন্ধ ছ়়ড়ানোর আশঙ্কায় দিন তিনেক পরে বস্তাটি খনিগর্ভে ঠেলে ফেলে দিয়েছে।

দেহ উদ্ধারের জন্য ভাঙা হচ্ছে খনিমুখের পাঁচিল। নিউ সাতগ্রামে। নিজস্ব চিত্র

এ দিন ছোটুকে সঙ্গে নিয়ে খনিমুখে যান তদন্তকারীরা। সেখানে পুলিশের বড় বাহিনীর সঙ্গে ছিল ইসিএলের উদ্ধারকারী দল। খনিমুখটির চার পাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। তার ভিতর ঝোপঝাড়ে ভরে গিয়েছে। পাঁচিলের একাংশ ভেঙে গাছগাছালি কেটে দেহ খোঁজা শুরু করে ইসিএলের উদ্ধারকারী দল। তবে সন্ধে পর্যন্ত চেষ্টা করেও দেহ উদ্ধার করা যায়নি। পুলিশ জানায়, প্রায় একশো ফুট নীচে জলের মধ্যে একটি বস্তা দেখা গিয়েছে। তবে এ দিন তা তোলা সম্ভব হয়নি।

বচ্চনবাবুর অভিযোগ, ‘‘ছোটু প্রায়ই আমার মেয়ের কাছে আসত। মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে ছোটু বলেছিল, অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে সে পালিয়ে গিয়েছে। ছোটুই আমাকে থানায় অপহরণের অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। আমি চাই, পুলিশ তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক।’’ গোটা ঘটনায় হতভম্ব সরিতার স্বামী রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। তবে এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। অপরাধীর যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে যান তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লক সভাপতি সাধন রায়। তিনি জানান, দোষীর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, খুনের মামলা রুজু করে ছোটুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Arrest Extra Marital Affair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE