রেফ্রিজেরেটর খুলেই চক্ষু চড়কগাছ। বহু দিনের পুরনো পোস্ত বাঁটা, ছাতা পড়ে যাওয়া খাবার ডাঁই করা সেখানে। মুহূর্তে ক্রেতাদের কাছে প্রশ্ন, ‘অর্ডার দিয়েছেন? আগে রান্নাঘরটা দেখে আসুন।’— প্রশ্ন, বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান স্বরূপ দত্তের। শুক্রবার দিনভর বর্ধমান শহরের নানা রেস্তরাঁ, হোটেলে অভিযান চালিয়ে এমনই নানা অনিয়ম দেখা গিয়েছে বলে দাবি বর্ধমান পুরসভার কর্তাদের।
বর্ধমানের রাধানগর এলাকা। সেখানেই এ দিন দুপুরবেলা অভিযানে যান স্বরূপবাবু, পুর-পারিষদ সদস্য খোকন দাস প্রমুখ। রেস্তরাঁয় ঢুকেই স্বরূপবাবু কর্মচারীদের প্রশ্ন করেন, ‘রান্নাঘর কোন দিকে? মাংস কোথায় রাখা হয়।’ তার পরে রেফ্রিজেরেটর খুলেই মাংসে বিপত্তি না দেখলেও অন্য খাদ্যসামগ্রী বহু দিনের পুরনো বলে তাঁরা।
ওই রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে দলটি যায় ঢলদিঘির নেতাজি মূর্তি লাগোয়া একটি নামী হোটেলে। সেখানে থাকা-খাওয়া, উভয়েরই ব্যবস্থা আছে। পুরসভার আধিকারিকেরা জানান, এই হোটেলের রেফ্রিজেরেটর থেকেও বহু দিনের পুরনো পচা ভেটকি, কালো হয়ে যাওয়া মাংস মেলে। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে স্বরূপবাবু হোটেল কর্তৃপক্ষকে লক্ষ করে বলেন, ‘আপনারা এটা খান!’ এর পরে ওই হোটেলের ব্যবসায়িক ছাড়পত্র দেখতে চাওয়া হয়। যদিও তাতে কোনও গরমিল মেলেনি বলেই জানা গিয়েছে। এর পরে পুরসভার আধিকারিকেরা একটি পচা ভেটকি, কালো হয়ে যাওয়া মাংস নমুনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান।
কেন এমন অভিযান? পুরসভা জানায়, কলকাতায় ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে শহরের রেস্তরাঁ, হোটেলগুলির কী হাল, তা খতিয়ে দেখতেই এই অভিযান। শুধু ওই দু’টি হোটেলই নয়, ঢলদিঘির আরও তিনটি হোটেলে এ দিন অভিযান হয়। সেখানে আপাত ভাবে কোনও গোলমাল নজরে না পড়লেও মাংসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযান শেষে স্বরূপবাবুর ক্ষোভ, ‘‘খালি চোখে মাংস ভাগাড়ের কি না, বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু রেস্তরাঁগুলির রান্নাঘরের যা হাল, তাতে এমনিতেই তা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার কোনও বালাই নেই।’’ যাবতীয় নমুনাগুলি পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হবে বলে পুরসভা জানায়। চেয়ারম্যান আরও জানান, নমুনা পরীক্ষায় কোনও বিপত্তি ধরা পড়লে ওই রেস্তরাঁগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী দিনেও ধারাবাহিক ভাবে এমন অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরূপবাবু।
পচা: খাবারের এমনই সব নমুনা। নিজস্ব চিত্র
এই ধরনের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশ। শহরের বিরিয়ানি ব্যবসায়ী রতন শোনকার বলেন, ‘‘এমন অভিযান অবশ্যই জরুরি। তা হলে সাধারণ মানুষের সামনেও আসল ছবিটা উঠে আসবে।’’
এ দিনই ভাতারের বেশ কিছু পোলট্রি ফার্মে নজরদারি চালায় পুলিশ। পোলট্রি ফার্ম মালিকদের সংগঠনের তরফে টাইটন রায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ভাতারের কোনও ফার্ম মরা মুরগি বিক্রি করে না। মুরগি মারা গেলে তা গর্ত করে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পুঁতে ফেলা হয়।’’ এ বিষয়ে সমস্ত পোলট্রি ফার্মকে সংগঠনের তরফে সতর্কও করা হয়েছে বলে জানান টাইটনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy