বিভিন্ন জমিতে নাড়া পোড়ানোর এমন ছবি দেখা যায় প্রতি বছরই। নিজস্ব চিত্র
কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে আশপাশ। দমবন্ধ অবস্থায় পড়েন বাসিন্দারা। ক্ষতি হয় জমিরও। তবু ফসল কেটে নেওয়ার পরে জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধ করছেন না চাষিদের অনেকেই। সম্প্রতি দিল্লিতে দূষণের পিছনে পঞ্জাব, হরিয়ানায় এই রকম নাড়া পোড়ানোই কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে। চাষিরা এখন থেকে সতর্ক না হলে দূষণের তেমন ছবি এ রাজ্যেও দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে কাস্তে দিয়ে ধান কাটায় সামান্য কিছু অংশ জমিতে পড়ে থাকত। জমিতে ধান ঝাড়াও হত না। ফলে, খড় পড়ে থাকার সমস্যা ছিল না। এখন শ্রমিকের অভাব এবং খরচ ও সময় বাঁচাতে বেশিরভাগ কাজই হয় যন্ত্রে। ধান কাটার জন্য ‘কম্বাইন হারভেস্টর’ যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তাতে ফসলের প্রায় দ্বিগুণ লম্বা গোড়া ও খড়ের টুকরো পড়ে থাকছে। পরবর্তী ফসল চাষের জন্য দ্রুত জমি সাফ করার তাগিদে তাতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন অনেক চাষি। কিন্তু তার ফলে যে দূষণ ছড়াচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়নি।
কৃষি দফতরের মতে, নাড়া পোড়ানোর ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড বাতাসে মেশে। চাষে উপকারী পোকামাকড়, জীবাণু বা অণুখাদ্য পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। চাষের জন্য জমির উপরিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ছ’ইঞ্চি অংশ আগুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, জমির উর্বরতা কমে। যদিও প্রবীণ চাষিদের অনেকেরই দাবি, পোকামাকড় মারতে জমিতে আগুন ধরানোর রীতি চলে আসছে বহু দিন। ছাই জমিতে সার হিসেবে কাজ করে।
আরও পড়ুন: বরাবর বিতর্কে এই তৃণমূল কাউন্সিলর, এ বার পুলিশকর্মীকে প্রকাশ্যে খুনের হুমকি গুসকরার মল্লিকার!
চাষিদের এই যুক্তি উড়িয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগুন না ধরিয়ে নাড়া পচিয়ে সার হিসেবে জমিতে মিশিয়ে দেওয়া যায়। তাতে জমিতে কেঁচো জাতীয় প্রাণীর সংখ্যা বাড়তে পারে। জমির উর্বরতাও বাড়ে।’’ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, “নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফারের মতো ১৭টি মৌল প্রয়োজন গাছের। যা গাছের মধ্যেই থাকে। নাড়া পোড়ানোর ফলে ওই সব মৌল বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়ে নষ্ট হচ্ছে।’’
মূলত অক্টোবর ও নভেম্বরে নাড়া পোড়ানো হয়। এ বার বৃষ্টির জন্য জমি থেকে ধান তুলতে দেরি হওয়ায় এখনও নাড়া পোড়ানো বিশেষ শুরু হয়নি। জেলায় কাঁকসা ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে এই ছবি বেশি দেখা যায়। পরিবেশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ ফেব্রুয়ারি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, নাড়া পুড়িয়ে দূষণ ছড়ালে ১৯৮১ সালের দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ (৫) ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বায়ু দূষণ রুখতে রাজ্যে নাড়া পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার পরেও কেউ তা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।’’
কিন্তু আইনভঙ্গকারীকে ধরা যাবে কী ভাবে? পরিবেশ দফতরের কর্তাদের দাবি, সচেতন নাগরিকেরা যদি খবর দেন তবেই জানা সম্ভব। তা না হলে এলাকায় ঘুরে অভিযান চালানোর মতো লোকবল ও পরিকাঠামো দফতরের নেই। জেলা কৃষি দফতরেরও দাবি, চাষিদের সচেতন করার চেষ্টা কয়েক বছর ধরেই চলছে। তবে নিয়মিত নজরদারির পরিকাঠামো তাদেরও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy