বাঁ দিক থেকে, মৃত আবুল কাশেম ও আব্দুস সাত্তার। নিজস্ব চিত্র
রাতে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের। বন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে ভোরে মারা যান আর এক বৃদ্ধও, দাবি পরিবারের। কাটোয়ার নতুনগ্রামের বাসিন্দা ওই দুই পরিবারের আরও অভিযোগ, আবুল কাশেম শেখ (৫৯) ও আব্দুস সাত্তার শেখ (৬০) সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে আলোচনা করতেন। সেই ‘আতঙ্কে’ই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। তৃণমূলের দাবি, কেন্দ্র সরকারের ভুল নীতি, বিভাজনের ফলে এই মৃত্যু। বিজেপির যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
কাটোয়ার মহকুমাশাসক প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘নতুনগ্রামে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। কী ভাবে মৃত্যু হল জানতে পুলিশের রিপোর্ট দেখা হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়ার নতুনগ্রামের পশ্চিমপাড়া আবুল কাশেম শেখ ও দক্ষিণ পাড়ায় আব্দুস সাত্তারের বাড়ি। দু’জনেই গত কয়েকদিনে নিজেদের পরিচয়পত্র-সহ নানা নথি নিয়ে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ছোটাছুটি করেছেন। সব সময় দু’জনে এই নিয়ে চিন্তা করতেন বলেও প্রতিবেশীদের দাবি। মৃত আবুল কাশেম শেখের স্ত্রী হাসিনা বিবির দাবি, তাঁর স্বামীর কোনও রোগ ছিল না। ‘এনআরসি’ নিয়ে আতঙ্কে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ অন্য নথিপত্র ঠিক করার জন্য কয়েকদিন ধরেই ঘোরাঘুরি করছিলেন তিনি।
হাসিনা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে অন্য দিনের মতোই খাওয়াদাওয়া করে শুতে যান স্বামী। তখনও একই কথা বলছিলেন। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বুকে ব্যথা শুরু হয়। ডাক্তার ডাকা হয়। তার পরেই মারা যান।’’ আব্দুস সাত্তার শেখের ছেলে জাহ্নবী শেখেরও দাবি, ‘‘দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে ভেবে খুব চিন্তা করত বাবা। আবুল চাচার মৃত্যুর খবর শোনার পরেই শরীর খারাপ হয়। ভোর ৪টে নাগাদ বাবা আচমকা মারা যান।’’ তাঁরও দাবি, তাঁর বাবার কোনও রোগ ছিল না।
এ দিন বিকেলে দু’জনের দেহ কবর দেওয়ার সময় ভিড় জমিয়েছিলেন গ্রামবাসী। লাইলি বিবি নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ওঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। মাঠে চাষের কাজ করতে গিয়েও একই আলোচনা করত। একই সঙ্গে নথিপত্র ঠিক করতে অফিসে যেত। একই সঙ্গে মারা গেল।’’
কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ও বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির জন্যই ওই দুই ব্যক্তি এনআরসি আতঙ্কে মারা গিয়েছেন।’’ সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভোটার, আধার কার্ড কোনওটাই বৈধ নয় বলছেন। এই চিন্তাতেই ওই দুই ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। আমরা ওই পরিবারের পাশে আছি।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের দাবি, ‘‘বাংলায় এখনও এনআরসি চালু হয়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূল আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ওই দু’জনের সাধারণ মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy