কালনা থানায় এলেন পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র
খাঁ খাঁ দুপুর। লাল মোটরবাইকে করে চষে বেড়ানো এলাকায়। খানিক ধীরে...। নজর, রাস্তার ধারে বাড়িতে। দরজা আলতো ভেজানো বা হাট করে খোলা থাকলেই পা টিপে টিপে ঢুকে পড়ত সে। একা মহিলাকে দেখলেই পরপর রডের আঘাত। রেয়াত পেতেন না ঘুমন্ত মহিলারাও। আর দরজা খোলা না থাকলে ‘মিটার দেখব’, এই বলে প্রথমে বাড়ি ঢোকা আর তার পরেই হামলা চেন পেঁচিয়ে।
— কালনার ‘চেন কিলার’ কামরুজ্জামান সরকারকে জেরা করে তার দুই ‘অস্ত্রের’ এমন ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার, কেন ব্যবহার, তা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা গিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দাবি করল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসে জেলার চার জায়গায় যে খুনের ঘটনা ঘটে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট বাড়ির দরজা খোলা ছিল এবং নিহত মহিলারা সেই সময়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। ২০১৩ ও ২০১৮-র শেষ থেকে চলতি বছরের গোড়ার দিকে ঘটনাগুলিতে চেনের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
তদন্তকারীরা জানান, খুনের হাতিয়ার হিসেবে প্রাথমিক পছন্দ ছিল এই চেনই, জানিয়েছে কামরুজ্জামান। তবে জেরায় সে আরও জানায়, মহিলাদের গলায় চেন পেঁচাতে গিয়ে অনেক সময়েই তা পিছলে যেত। তা যাতে না হয়, সে জন্য নিভুজি-সহ নানা জায়গা থেকে কেনা চেনের দু’প্রান্তে গাড়ির চাকার ‘টিউব’ আটকে দেয়। তার পরেও মেমারি-সহ দু-একটি জায়গায় সে ব্যর্থ হয়! আর তার পরেই কামরুজ্জামানের অস্ত্র-ভাণ্ডারে জায়গা হয় রডের। এমনকি, ধরা পড়ার মাসখানেক আগে পর্যন্ত যে ক’টি খুন সে করেছে, সেখানে বাজারের থলিতে রাখা রডই বেশি ব্যবহার করত, জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিন বেলা ৩টেয় কালনা থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা কামরুজ্জমানকে জেরা করতে আসেন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। থানায় এসে জেলা ও মহকুমা পুলিশের নানা স্তরের কর্তা এবং জেলার বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন পুলিশ সুপার। তার পরেই ভাস্করবাবুর নেতৃত্বে শুরু হয় টানা আড়াই ঘণ্টার ম্যারাথন জেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোটা জেরা পর্বে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় বিভিন্ন তথ্য জানিয়ে দেয় কামরুজ্জামান। এমনকি, যে যে জায়গায় সে খুন করেছে বলে পুলিশের দাবি, সেই সমস্ত এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, বাড়ির দরজা, আসবাবপত্রের রংও জানিয়ে দেয় কামরুজ্জামান। পুলিশের দাবি, জেরায় সে ২০১৩ সালেও যে দু’টি খুন ও একটি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে স্বীকার করে।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ থেকে ২০১৮, খুনে এই দীর্ঘ পাঁচ বছরের ‘বিরতি’র সময়ে কামরুজ্জামান কী করছিল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। ধৃত পুলিশকে জানায়, সে পাঁচ বছর কেরলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেছিল। লোহা ভাঙাচোরা, গুল প্রভৃতির ব্যবসাও করেছে। কিন্তু ফের ফিরে আসে পুরনো ‘পেশা’ চুরিতেই। আর সেই সূত্রেই খুনের পথ ধরা।
কিন্তু চুরি করতে গিয়ে খুন কেন? পুলিশ জানায়, এই প্রশ্নের উত্তরে কামরুজ্জামান সটান জানিয়েছে, প্রমাণ লোপাটই মূল উদ্দেশ্য ছিল তার। পুলিশের দাবি, এ পর্যন্ত মোট ১৩টি অপরাধের ঘটনায় কামরুজ্জামান জড়িত বলে জানা গিয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের একাংশের।
জেরা শেষে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত একটি মামলায় কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যতগুলি ঘটনা ও ঘটিয়েছে, প্রতিটির জন্য আলাদা মামলা দায়ের ও চার্জশিট দেওয়া হবে। তবে মনে করা হচ্ছে, চুরির উদ্দেশ্যেই খুন। ওকে আরও জেরা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy