ভিজে বারান্দাতেই ক্লাস চলছে কাটোয়ার কৈথন উচ্চ বিদ্যালয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম, যেগুলি আছে সেখানেও চাঙর ভেঙে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে বারান্দাতেই ব্ল্যকবোর্ড ঝুলিয়ে ক্লাস চলছে কাটোয়ার কৈথন উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর বৃষ্টি এসে গেলে বই-খাতা গুটিয়ে ছুটি। দু’মাস ধরে এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, কাটোয়া ১-এর বিডিও, সর্বশিক্ষা দফতর এমনকী সংখ্যালঘু দফতরেও চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা, কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।
মাধ্যমিক স্তরের এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৮৮ জন। যার মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে রয়েছে ১৭৪ জন এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া ১২৪ জন। মূলত এই দুটি ক্লাসই বারান্দায় বসে। স্কুলে গিয়েও দেখা যায়, এক ফালি বারান্দায় গাদাগাদি করে বসে রয়েছে পড়ুয়ারা। বারান্দার এক পাশে ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষক। এর মধ্যেই অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় হুটোপুটি শুরু হয়ে যায় পড়ুয়াদের মধ্যে। বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচতে বারান্দায় সিঁটিয়ে যায় তারা। পড়া থেকে মনও চলে যায় বৃষ্টির দিকে। বৃষ্টির আওয়াজে পড়া থামিয়ে দিতে বাধ্য হন শিক্ষকও। আধ ঘণ্টা পরে বৃষ্টি থেমে যেতেই পড়ুয়ারা বাড়ির দিকে দে ছুট। ষষ্ঠ শ্রেণির জেসমিন খাতুন, লক্ষ্মী মাঝি, আসিফ শেখরা বলে, “গত দু’মাস ধরে বারান্দাতেই স্কুল চলছে। বৃষ্টি পড়লেই পড়াশুনো বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি থামলে ফের পড়া চালু হয়। জোরে বৃষ্টি পড়লে অবশ্য আমাদের ছুটি হয়ে যায়।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমেশ্বর দত্ত বলেন, ‘‘দুটি ঘরের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায় দিনই চাঙর, পলেস্তারা খসে পড়ে। কিছুদিন আগের ভূমিকম্পে বড় বড় ফাটলও ধরে গিয়েছে। এ অবস্থায় ঘরে ক্লাস চালানো বিপজ্জনক।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসন, স্কুল শিক্ষা দফতর ও সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে চিঠি লিখে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দ্রুত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা না হলে স্কুল চালানো খুবই মুশকিল হয়ে যাবে। কয়েকদিন আগে অভিভাবকদের সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। প্রধান শিক্ষকের আরও অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি শিক্ষকের সংখ্যাও কম। ফলে এমনিই ক্লাস চালাতে সমস্যা হয়। স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক লুৎফর রহমানও বলেন, “আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের সমস্যার কথা জানিয়ে বৈঠক করেছি। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিপজ্জনক ঘরগুলি বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এক অভিভাবক আলিম শেখও বলেন, “পড়াশুনোর ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ওই শ্রেণিকক্ষ খুলে দিয়ে পড়ুয়াদের দুর্ঘটনার মুখে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।”
তবে কাটোয়া ১-এর বিডিও আশিস দাসের আশ্বাস, “এ ব্যাপারে আমরা সংখ্যালঘু দফতর ও সর্বশিক্ষা মিশনের সঙ্গে কথা বলেছি।” ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু দফতরের কর্তারা ওই স্কুলের পরিস্থতি দেখে গিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy